ত্রিশালে দুই পাড়ের ফিশারীতে সড়কে পানি, চরম ভোগান্তি

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২২, ০৪:২৭ পিএম
ত্রিশালে দুই পাড়ের ফিশারীতে সড়কে পানি, চরম ভোগান্তি

ময়মনসিংহের ত্রিশালে দুই পাড়ের ফিশারিতে যেন খালে পরিণত হয়েছে পোড়াবাড়ী-কান্দানিয়া সড়ক। এই সড়কের পানির নিচের খানাখন্দে পড়ে নিয়মিতই ঘটছে দুর্ঘটনা। চলাচলে ওই এলাকার মানুষ পড়েছে  চরম ভোগান্তিতে।

পোড়াবাড়ী বাজার হতে এই সড়কের প্রায় এক কিলোমিটারে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। সড়ককে ফিশারির পাড় হিসেবে ব্যবহার করায় অল্প বৃষ্টিতেই সড়কে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। অথচ ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া, ভালুকা ও টাঙ্গাইল জেলার সখীপুর, ঘাটাইলের মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু সড়কটি বেহাল হয়ে পড়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ, ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের বেশির ভাগ অংশেই দু‍‍`পাশে ফিশারি রয়েছে। মালিকেরা তাঁদের ফিশারি খননের পর থেকে ওই সড়ক পাড় হিসেবে ব্যবহার করছে। এতে সড়কে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় পানির নিচে ডুবে থাকে সড়কটি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এভাবে সড়কে পানি জমে থাকায় পথচারীদের হেঁটে চলাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সড়কের পাশে পাড় ছাড়াই ফিশারি নির্মাণ ঠেকাতে ও সড়কের উচ্চতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ত্রিশালের পোড়াবাড়ী-কান্দানিয়া সড়কে তেমন কোনো উদ্যোগ নেননি। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

শিক্ষার্থী সুমন মিয়া বলেন, “ এই সড়কে আমাদের স্কুলে আসা-যাওয়া করতে খুব কষ্ট হয়। একহাতে জুতা ও আরেক হাতে বই নিয়ে পানি মাড়িয়েই আসা-যাওয়া করি। ফিশারির পাড় দিয়ে ঘুরে আসার সুযোগ থাকলেও মালিকেরা বেড়া দিয়ে পথ আটকে দেয়। ফিশারিগুলোর জন্যই সড়কের এই বেহাল দশা‍‍`।

পোড়াবাড়ী বাজার এলাকার বাসিন্দা আজাহার  বলেন, ‍‍`রাস্তার চেয়ে ফিশারির পাড় উঁচু। ফলে বৃষ্টি হলেই বেশ কিছু অংশ পানিতে ডুবে থাকে। পানির নিচে খানাখন্দ থাকায় প্রায়ই বাইসাইকেল, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে‍‍`।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, পিচঢালা এই সড়ক কয়েক বছর আগে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ নিম্নমানের হওয়ায় এলাকাবাসী বাধা দিলে উপজেলা প্রশাসন গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী-ই রয়ে গেছে‍‍`।

স্থানীয় বাসিন্দা সুমন বলেন, ‍‍`এই সড়কে পানির নিচের খানাখন্দে পরে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। কিছুদিন পরপরই খানাখন্দে আটকে যাচ্ছে যানবাহন। এতে অনেক সময় বন্ধ থাকছে যানবাহন চলাচল। এলাকার কিছু ফিশারির মালিক পাড় নির্মাণ করে সড়কের দু‍‍`পাশে উঁচু করে রেখেছে। এতে করে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে থাকছে‍‍`।

বৃদ্ধ ছাবেদ আলী ফকির বলেন, ‘অম্ল বৃষ্টি হলেই এই রাস্তায় হাঁটু পানি জমে থাকছে। গাড়ির চালকেরা যাত্রী নিয়ে প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হয়। মানুষের বিভিন্ন ধরনের কথায় অনেক ফিশারির মালিক শ্যালো মেশিন দিয়ে রাস্তা থেকে পানি সরিয়েছে‍‍`।

এ বিষয়ে ফিশারির মালিক রেজাউল করীম বলেন, “আমি একা পানি নিষ্কাশনের জায়গা রেখে পাড় করলে কি লাভ। আশপাশে কোনো পুকুরেরই পাড় নেই। সবাই পাড় নির্মাণ করলে আমিও করবো‍‍`।

তবে এ বিষয়ে আরও কয়েকজন ফিশারির মালিকের সাথে কথা হলে তারা কোনো উত্তর না দিয়ে বিষয়টিকে এড়িয়ে যান।

এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, ‍‍`পোড়াবাড়ী-কান্দানিয়া সড়ক মেরামতের জন্য এখনো কোনো অনুমোদন পায়নি। অনুমোদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে‍‍`।

ত্রিশাল উপজেলার সহকারী কমিশনার(ভূমি) হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যদি ফিশারি করা হয় এবং তাতে রাস্তায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, তবে ফিশারি মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এআই