উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদানের পর দেখেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা। পরে কারণগুলো খোঁজে বের করার চেষ্টা করেন তিনি। মহাসড়কে অবৈধ পার্কিং, বালু জমিয়ে ব্যবসা ও অবৈধ বাজার স্থাপনার কারণগুলো চিহ্নিত করে প্রতিকারের উদ্যোগ নেন ত্রিশালের ইউএনও মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান।
পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেন। প্রথমে তিনি সড়কে দুর্ঘটনা রোধকল্পে উপজেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটির সাথে মতবিনিময় করেন। যেখানে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও অংশ গ্রহণ করেন, পুলিশ ও সড়ক বিভাগ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, মালিক ও শ্রমীক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় সাংবাদিকগণ।
পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফুটওভার ব্রীজ থাকলেও মহাসড়ক ঘেষে গড়ে উঠা অবৈধ বাজার, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, অবৈধ যানবাহন এবং অবৈধ বাজার থাকার ফলে ফুটওভার ব্রীজটি ব্যবহার করা হত না। সবকিছু স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নিয়ে আসতে শুরু করেন উচ্ছেদ অভিযান। এরফলে নিরসন হয় দীর্ষদিনের যানজট সমস্যার।
ত্রিশাল বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় প্রতিষ্ঠিত সরকারী নজরুল ডিগ্রী কলেজ ত্রিশাল। এ কলেজের পূর্বাংশে রয়েছে কলেজ মার্কেট। যার সামনেও ছিল অবৈধ দখলদার ও নিয়মিত বাজার, এ বাজারটি বার বার উচ্ছেদ করলেও কিছুদিন পর পরই আবার চলে যায় দখলদারদেও আয়ত্বে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউএনও আক্তারুজ্জামান নিয়মিত বাজারটি নজরদারি করতে থাকেন ও একটি ভিন্ন উদ্যোগে স্থায়ী ভাবে অপসারিত হয়েছে ওই অবৈধ বাজারটি। তিনি সড়কের পাশে ও কলেজ মার্কেকেটের সামনে ওই খালি জায়গায় গড়ে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান। এতে সাধারণ মানুষ সহজেই সড়কের পাশ দিয়ে হাটতে পারছে এবং ফুট ওভারব্রিজও ব্যবহার করতে পারছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যানজট নিরসনকল্পে ত্রিশালবাসীর দীর্ঘদিনের একটি দাবি ছিল ট্রাফিক পুলিশের, যা সহজেই পূরণ করেছেন ইউএনও আক্তারুজ্জামান। তিনি জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় একাধিকবার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে নিয়ে আসলে গত ২৫ সেপ্টেম্বর এ দাবিটি বাস্তবে রূপান্তরিত হয়। একজন টিআই এর নেতৃত্বে দুইজন পুলিশ যানজট নিরসনে সার্বক্ষণিক কাজ করছে মহাসড়কে। বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করায় থ্রিহুইলারসহ অবৈধ তিন চাকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়েছে। সরে গেছে অবৈধ গাড়ির যত্রতত্র পার্কিংও।
এছাড়াও মহাসড়কটির ডিভাইডারের মাঝখানে আরো কিছু কাজসহ বাসষ্ট্যান্ড এলাকাকে সুন্দর্য বর্ধনেও নেয়া হয়েছে অনেক পরিকল্পনা। যেখানে খরচ হবে প্রায় এককোটি টাকা।
স্থানীয় শামীম, কামাল ও আবু হানিফ জানান, পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়ক ঘেষে বসেছিল অবৈধ বাজার। পাশেই ছিল পথচারীদের জন্য প্রায় কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ফুট ওভারব্রীজ। ব্রিজে উঠার রাস্তায়ই ছিল অবৈধ বাজারের ফলের দোকান গুলো। এতে সাধারণ মানুষের ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে অসুবিধা হতো। আবার মহাসড়কের উপর এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতো অবৈধ তিন চাকার যান। এতে প্রতিনিয়তই লেগে থাকতো যানজট।
স্থানীয় রোবায়েত হোসেন জানান, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এটি। অবৈধ বাজারের কারণে আগে আমাদের ফুট ওভারব্রীজ ব্যবহার করতে অসুবিধা হতো। তীব্র যানজট লেগে থাকতো এই মোড়ে। কোন কোন সময় তো এ অংশ পাড়ি দিতে এক ঘন্টারও বেশি সময় লেগে যেতো। এখন আর এ মোড়ে আমাদের যানজটে পড়তে হবে না। কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি তিতি কৃতজ্ঞতা জানান।
উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আক্তারুজ্জামান জানান, নিরাপদ সড়ক ও যানজট নিরসনে উপজেলা প্রশাসন সার্বিক দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহন করেছে। তারই অংশ হিসাবে ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শতাধিক দোকান উচ্ছেদ করে ফুলের বাগান তৈরি করা হয়েছে। মহাসড়কের এই অংশকে যানজট মুক্ত রাখতে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সড়ক ও জনপদ বিভাগ কর্তৃক প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। সর্বোচ্চ আগামী ২ মাসের মধ্যে এ কাজ শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ কাজের মধ্যে থাকবে রোড ডিভাইডারে গুনগত মানসম্পন্ন বেরিক্যাড নির্মাণ, ফুট ওভারব্রিজে উঠানামার রাস্তা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইটেম সমূহ।
তিনি বলেন, জনসাধারণের সুবিধার জন্য উপজেলা প্রশাসন কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করে তা বাস্তবায়ন করছে তবে এগুলোকে টিকিয়ে রাখা ও রক্ষনাবেক্ষন করতে হবে সকলকে। তাহলেই সকলের জন্য সড়ক হবে নিরাপদ।
এআই