বড় কোনো ক্ষতি ছাড়াই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং উপকূল পাড়ি দেওয়ায় কক্সবাজারে উপকূলীয় এলাকা মহেশখালীর মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। তিন দিন ধরে চরম আতঙ্কে ছিল এ অঞ্চলের লাখো মানুষ।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপজেলার সোনাদিয়া-কুতুবজোম ও কালারমার ছড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হতে থাকে, এ সময় বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়স্থলের দিকে ছুটে লোকজন। পরে অবশ্য রাত সাড়ে ১২টার দিকে জোয়ারের পানি কমতে শুরু করলে আশ্রয়স্থল ছেড়ে বাড়িমুখো হয় মানুষ। `সিত্রাং` এ মহেশখালীতে বড় কোনো ক্ষতি না হলেও চিংড়ি ঘের, চাষবাস ও প্লাবিত হয়ে অনেকের ঘর বাড়িতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সোমবার রাতের চেয়ে গত মঙ্গলবার সকালে জোয়ারের উচ্চতা কমেছে। এতে স্বস্তি দেখা গেছে উপজেলা মাতারবাড়ি, ধলঘাটা, সোনাদিয়া ও কুতুবজোমের নদ–নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে। গতকাল জোয়ারের তোড়ে ভেঙে গেছে মাতারবাড়ি-চালিয়াতলি প্রধান সড়কের একাংশ। ফলে চরম দূর্ভোগে পড়ে পথচারীসহ অসংখ্য যানবাহন। অল্পকিছু সময় বন্ধও ছিলো যানচলাচল। সাগর বেষ্টিত এ উপজেলার এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মহেশখালী উপজেলা প্রশাসনের উদাসীন ভূমিকা লক্ষ্য করা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে প্রাকৃতিক দূর্যোগ চলাকালীন সময় সোমবার রাত ১১টা অব্দি দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা ছিলোনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ইয়াছিনের। এমন অবস্থা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় সাংবাদিক ও জনতার সমালোচনার তোপে পড়ে কয়েকটি এলাকায় নামমাত্র পরিদর্শন করেন ইউএনও। প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঠপ্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি পূর্ব প্রস্তুতি।
দূর্যোগ মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের এমন নির্লিপ্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ ও শিক্ষক সমাজ। সোনাদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোক্তার আহমেদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন- বিরান সোনাদিয়া, একমাত্র আল্লাহই তাদের রক্ষা করেছেন। কোন প্রস্তুতি ছিলনা কোন কর্তৃপক্ষের। পুর্ণজোয়ারের সময় বাতাসের গতি কমে যাওয়ায় রক্ষা পেয়েছেন তারা, বাতাসের আরেকটু গতি বাড়লেই উপচে পড়ত দক্ষিণ দিক থেকে চরছেড়া পানি তখন পানিতে ভাসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকতনা তাদের। কেন তাদের জন্য বিকল্প কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কোন কর্তৃপক্ষ?
এদিকে মাতারবাড়ি এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘গতকাল সারা রাত একফোঁটাও ঘুম হয়নি। সারারাত সাইক্লোন শেল্টারের ভেতরে বসে ছিলাম। কখন না জানি বাঁধ ভেঙে যায়, এই চিন্তা ছিল। শেষ পর্যন্ত বাঁধ ভেঙেই গেলো।
পাশে থাকা খাদিজা বেগম নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘নদীর পাড়ের মানুষ আমরা। ছোটখাটো ঝড় আসলেই মনটা ছোট হয়ে যায়। গতকালকের কথা কী আর বলব! তাড়াহুড়া করে সাইক্লোন শেল্টারে এসেছিলাম, কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে কত মানুষ, আমরা গিয়ে তো জায়গা পাই না। ঝড় আসলে জেগে থেকে রাত কাটানো আমাদের নিয়তি। তবু স্বস্তি, কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’
কেএস