বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে যেন পিকনিক চলছে। বড় বড় হাঁড়িতে বসানো রান্না। প্যান্ডেল টানিয়ে চলছে আড্ডা, হই-হুল্লোড়। এটা বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশস্থলের বৃহস্পতিবার রাতের চিত্র। সমাবেশ শনিবার হলেও নেতা-কর্মীরা এখানে জড়ো হতে শুরু করেছেন বৃহস্পতিবার থেকেই।
তারা বলছেন, সমাবেশ যেন সফল না হয় সেজন্য শুক্রবার থেকে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এ কারণে আগেভাগেই তারা সমাবেশস্থলে চলে এসেছেন। সমাবেশের আগের দুই রাত এখানেই কাটাবেন। বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে বরিশাল নগরীতে আসতে শুরু করেছেন। মিছিল নিয়ে তারা সন্ধ্যার পর থেকে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জড়ো হয়েছেন। সমাবেশের প্রায় ৪০ ঘন্টা আগেই জেলা-উপজেলা থেকে আসা নেতা কর্মীতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলস পার্ক)।
বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে গিয়ে দেখা গেছে এমন একটি চিত্র। বিভাগের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতা কর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো বঙ্গবন্ধু উদ্যান ও বরিশাল নগরী। পাশাপাশি দুপুর থেকেই নেতারা তাদের কর্মীদের জন্য মাঠেই খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। রাতেও চলছে মাঠের কোনায় কোনায় রান্নার কাজ।
এদিকে রাত সাড়ে আটটায় মাঠ পরিদর্শনকালে কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, প্রায় দুই দিন আগে থেকেই মাঠে নেতা কর্মীতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। সারাদেশে যে সমাবেশ গুলো হয়েছে সেই সমাবেশ গুলোই প্রমাণ করে দেশের মানুষ এই সরকার চায় না। তারা এই সরকারের পদত্যাগ চায়।
দেখো গেছে, সমাবেশ মঞ্চের পাশেই নেতা-কর্মীদের জন্য রান্নার আয়োজন হয়েছে। হাঁড়িতে হাঁড়িতে হাজারের মতো নেতা-কর্মীদের জন্য রান্না হচ্ছে খিচুড়ি ও মুরগির মাংস। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন, উদ্যানেই রাতে ঘুমাবেন দূর থেকে আসা নেতা-কর্মীরা। কারণ আবাসিক হোটেলগুলোতে পুলিশ অভিযানের নামে তাদের হয়রানি করতে পারে তাই।
তিনি বলেন, ‘সব ধরণের পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে সরকার আমাদের সমাবেশ ঠেকাতে। তবে তাদের কোনো উদ্যেগই সফল হবে না। জনগণের জন্য আন্দোলনে সব বাধা অতিক্রম করে দুই দিন আগেই সমাবেশস্থলে হাজির হচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। ঠান্ডার মধ্যেও ত্রিপল টানিয়ে মাঠেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘সমাবেশস্থলেই রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতেই বোঝা যায় সরকার কোনো বাধা দিয়েই আমাদের সমাবেশে নেতা-কর্মীদের আসা আটকাতে পারবে না।’
সমাবেশে যোগ দিতে আসা বিএনপি’র কর্মী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে বরিশালের সঙ্গে অন্যান্য স্থানের যোগাযোগ বন্ধ হওয়া শুরু হয়ে গেছে। লঞ্চ, বাস, অটো, ট্রাকসহ সব যানবাহন বন্ধ রাখছে। তাই আমরা দুই দিন আগেই সমাবেশে যোগ দিয়েছি। এই জায়গায় নামাজ আদায় করতে পেরে এখন একটু শান্তি লাগছে।’ লক্ষ করা গেছে নেতা-কর্মীদের মাঠের গাছতলায় তাঁবুর নিচে আশ্রয় নিতে। কয়েকজন পাটি বিছিয়ে খোলা আকাশের নিচেই শুয়ে পড়েছেন।
সমাবেশে আসা নেতাকমীরা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে থাকতে দুইদিন এই খোলা আকাশের নিচেই থাকব। খাব-দাব সব এইখানেই। পুলিশ নিয়ে আসলেও আমরা আন্দোলন করব।’
বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলসিক জাহান শিরিন বলেন, বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে আসা নেতা কর্মীদের বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তারপরও কোনো কিছুতেই বরিশালের গণসমাবেশে জনস্রোত ঠেকানো যাবে না। প্রয়োজনে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ পায়ে হেটে, সাইকেলে, ট্রলার ও নৌকায় চেপে আসবেন।
তিনি আরো বলেন, সমাবেশস্থলে এখনই এত নেতাকর্মী, তাহলে ভাবুন বরিশালে কত হাজার নেতাকর্মী অবস্থান করছে। সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটবে আশা করি ।