গুইমারায় ৬৫০ পরিবারকে মানবিক সহযোগিতা প্রদান

গুইমারা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২২, ০৪:১১ পিএম
গুইমারায় ৬৫০ পরিবারকে মানবিক সহযোগিতা প্রদান

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে স্থিতিশীল শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের আওতাধীন গুইমারা রিজিয়ন বিভিন্ন আভিযানিক কর্মকান্ড পরিচালনার পাশাপাশি, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসমূহের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ধরনের জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি পালন করে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সকাল থেকেই গুইমারা সরকারি কলেজ মাঠে গুইমারা রিজিয়ন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এর যৌথ আয়োজনে স্থানীয় জনসাধারনের মাঝে ৩০০ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান, ৩০০টি পরিবারকে ১০ টাকার সুপারশপ হতে ব্যাগ ভর্তি বাজার (এক টাকায় চাল, দুই টাকায় ডাল এভাবে ১০ টাকার পণ্য ক্রয় করা যাবে যার বাজার মূল্য ৫০০-৬০০ টাকা) এবং ৫০ টি পরিবারকে সম্প্রীতি বিপনীর মাধ্যমে সর্বমোট ৬৫০টি পরিবারের মাঝে মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মানবিক সহায়তা, ব্যাগ ভর্তি বাজার এবং সম্প্রীতি বিপণীর উদ্ভোধন করেন, ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা), খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। ২৪ আর্টিলারি ব্রিগেড, গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ কামাল মামুন বিএএমএস, এনডিসি, পিএসসি, জি সার্বিক নির্দেশনায় এই উপলক্ষে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, পার্বত্য চট্রগ্রামের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি বাসন্তি চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কংজরী চৌধুরী, গুইমারা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মেমং মারমা প্রমুখ।

এছাড়া সিন্দুকছড়ি, লক্ষীছড়ি এবং মাটিরাঙ্গার সেনা জোনের জোন কমান্ডারগন, গুইমারা থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো: আব্দুর রশিদ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং রিজিয়নের পদস্থ সেনা কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন।  

এরই মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে খাগড়াছড়ির গুইমারাতে যাত্রা শুরু করলো সম্প্রীতি বিপণী। পাহাড়ে আনাচে-কানাচে যুগযুগ ধরে বসবাসকারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের দেখা মিলবে চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি মহাসড়কে গুইমারা চেকপোস্ট সংলগ্নে অবস্থিত অপরূপ কারুকার্যে সজ্জিত এই সম্প্রীতি বিপনীতে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পক্ষথেকে জানানো হয়, ইউরোপ আমেরিকায় বেড়াতে গিয়ে ডলার দিয়ে স্যুভেনির কিনে বসার ঘর সাজাই আমরা। আর দেশের জিনিস দেখলে সস্তা বাঁশ, সুতা বলে শ্রমের দামটাই দিতে চাই না। বিদ্যানন্দ তাই সারাদেশে ঘুরে কুঠির শিল্পগুলো বাঁচাতে চাচ্ছে, সংগ্রহ করে আনছে মানুষের কাছে। মানুষ যে দাম দিবে, সেটাই পৌঁছে যাবে শিল্পীর কাছে।

সম্প্রীতি বিপণীর দুইটি অংশ। সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য দাতব্য অংশ এবং সচ্ছল/টুরিস্টদের জন্য বাণিজ্যিক অংশ। তবে বাণিজ্যিক অংশ খুব ছোট পরিসরে হবে। সেনাবাহিনী কিংবা সিভিল প্রশাসন কিংবা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীর গাইডেন্সে বিভিন্ন অঞ্চলে দুঃস্থ জনসাধারণের মাঝে টোকেন/কার্ড দেয়া হবে। নির্ধারিত সে টোকেনে নির্দিষ্ট দিনে এসে রেশন পণ্য নিয়ে যেতে পারবে নাম মাত্র (এক, দুই টাকা) মূল্যে। মাসিক রেশনের নির্দিষ্ট টোকেন থাকবে যা শুধুমাত্র নিঃসন্তান বিধবা, অসহায় বৃদ্ধ (যাঁদের সন্তান দেখে না)। তারা নির্দিষ্ট তারিখে এসে রেশন নিয়ে যাবেন। এ সেবাটি মূলত দূর্গম এলাকার মানুষের জন্য। এক্ষেত্রে সম্প্রীতি বিপণী তাদের পরিবহন খরচও বহন করবে।

বাণিজ্যিক অংশের কুটির শিল্পের পণ্য গুইমারার সম্প্রীতি বিপনীর পাশাপাশি পাওয়া যাবে ভ্রাম্যমাণ গাড়ি থেকে। এই গাড়িটি পণ্য নিয়ে ছুটির দিনে থাকবে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পর্যটন স্পটে। বিক্রয়কৃত পণ্যের অংশ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ চ্যারিটি অংশে খরচ করা হবে।প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর তৈরীকৃত কুটিরশিল্প পণ্যের পাশাপাশি থাকবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অসহায় নারী যেমন পাহাড় ও রোহিঙ্গা শরণার্থী নারীদের কর্তৃক তৈরীকৃত পন্য। এ ছাড়া গুইমারা রিজিয়ন ও বিদ্যানন্দের বিভিন্ন প্রজেক্টের উৎপাদিত পণ্য থাকবে সম্প্রীতি বিপণীতে।

গুইমারা রিজিয়নে নিয়োজিত সেনা, বিজিবি, আনসার, পুলিশসহ সকল নিরাপত্তা বাহিনী শান্তি সম্প্রীতি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলসভাবে প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

কেএস