কক্সবাজারের পেকুয়ায় গাছ পাচারের মহোৎসব চলছে।দিনে কিংবা গভীররাতে হরদম পাচার হচ্ছে গর্জন (মাদার ট্রি)সহ বিভিন্ন প্রজাতির মুল্যবান গাছ। অভিযোগ ওঠেছে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হককে মোটাংকের ম্যানেজ করে প্রতিদিন গাড়িযোগে পাচার হচ্ছে এসব গাছ। রাত যত গভীর হয় ততই গাছ পাচারের সুবিধা হয়। তাই গভীররাতই সুবিধাজনক সময় বাছাই করে গাছ পাচারে মেতে ওঠে কয়েকটি শক্তিশালী পাচার চক্র। কর্তা বাবু রাজি থাকায় ফুরফুরে মেজাজে দিব্যি পাচার হচ্ছে গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির চিরাই কাঠ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হকের সাথে উপজেলার কাঠ ব্যবসায়ীর রয়েছে গভীর সখ্যতা। তাকে ম্যানেজ করে গাছ পাচারে জড়িয়ে পড়ছে ব্যবসায়ীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন,কর্তাবাবু রাজি না থাকলে কিভাবে সম্ভব গাছ পাচার। এটা আপনারাও বুঝেন। রেঞ্জ কর্মকর্তার অর্ডার ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়েনা। গাছ আনতে হলে লাইন (টাকা দিয়ে অনুমতি) নিতে হয়।
এদিকে বুধবার (৯ নভেম্বর) ভোর রাতে পাচার করার সময় পেকুয়া চৌমুহনী ষ্টেশন থেকে অভিযান চালিয়ে পিকআপ ভর্তি গর্জন গাছ জব্দ করে বারবাকিয়া রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা আমির হোসেন গজনবী। এছাড়া পৃথক অভিযান চালিয়ে ভোর ৫ টার দিকে টইটং ইউপির ধনিয়াকাটা এলাকা থেকে দুইটি ট্রলি ভর্তি চিরাই কাঠ জব্দ করেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এসব চিরাই কাঠ ও মাদার ট্রি রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হকের যোগসাজসে পাচার হচ্ছিল। কিন্তু বিধি বাম। বারবাকিয়া বনবিট কর্মকর্তা আমির হোসেন গজ নবী এসব কাঠ ও গাছ জব্দ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লামা উপজেলার আজিজ নগর এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরে গর্জন পাচার হচ্ছে। এসব গর্জন পাচারে জড়িত একটি শক্তিশালী গাছ পাচার সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সাথে রেঞ্জ কর্মকর্তার দহরম সম্পর্ক রয়েছে। তিনি তাদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে পাচার কাজে সহযোগিতা করেন। তবে হারবাং, আজিজ নগর এলাকা থেকে যেসব গর্জন পাচার হয় প্রতি পিচ অনুযায়ী সুবিধা নেন রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক এমন অভিযোগও ভুরিভুরি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক নিজের ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ে গভীর রাতে রাস্তায় পাহারা দেন। হারবাং আজিজ নগর এলাকা থেকে কত গাড়ী ও কয়টি গর্জন নিয়ে যায় তা গননা করেন তিনি। এছাড়া পেকুয়ায় পাহাড়ী এলাকা থেকে নজিরবিহীন গর্জন পাচার হয়েছে রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক যোগদানের পর থেকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বারবাকিয়া রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা আমির হোসেন গজনবী বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক এ. কে এম মাজহারুলের নির্দেশে রাত সাড়ে ৩ টায় পেকুয়া চৌমুহনী এলাকা থেকে গর্জন গোল গাছ ১৮ টুকরা -১২৩.৯৬ ঘনফুট ও গর্জন বল্লী ২৯ টি একটি পিক-আপ জব্দ করা হয়েছে। পরে ভোর ৫ টায় ধনিয়াকাটা এলাকা থেকে ১১০ টুকরা/ ১১৯ ঘনফুট চিরাই কাঠসহ দুইটি ট্রলি গাড়ী জব্দ করা হয়। গর্জন পাচারের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমার কারও সাথে গভীর সম্পর্ক নেই। কোন কাঠ ব্যবসায়ীর সাথে কোথাও গোপন বৈঠক হয়নি। আমি ছুটিতে আছি। গাছ পাচারের জড়িতদের কাছ থেকে কোন অনৈতিক সুবিধা নিই না। এগুলো মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত ছড়ানো ছাড়া আর কিছু না।
কেএস