নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় মাঠের পর মাঠ, গ্রামের পর গ্রাম এক কথায় পুরো উপজেলা জুড়ে হিমেল হওয়ায় দোল খাচ্ছে হাজারো কিষাণ কিষাণীদের স্বপ্ন। প্রতিটি শীষে যেন কৃষকের জীবনের স্বপ্ন ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তেরোটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত উপজেলাটি। এই উপজেলা কৃষি নির্ভর। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় রোপা আমন। প্রতিটি মাঠে শোভা পাচ্ছে কোথাও লালচে সবুজ, আবার কোথাও পুরোটায় লালচে রোপা আমনের সোনালি শীষ।
পুরো উপজেলার আনাচে-কানাচে রোপা আমনের চাষ হয়ে থাকে। ২০ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে ব্রিধান-২৬, ২৭, ব্রিধান-৪৮, সামনা, কুটিয়াংটি ইত্যাদি জাতের রোপা আমন। এবারে রোপণ থেকে এখন পর্যন্ত কৃষকদের দ্বিগুণের বেশি খরচ গুনতে হয়েছে। সেচের পানিতে রোপণসহ অতিরিক্ত হার, বাড়তি দামে সার কীটনাশক ব্যবহার ইত্যাদি সমস্যাদি কৃষকদের মড়ার উপর খাড়ার ঘায়ের মত হয়ে আছে। ফলে কেমন ফলন, উৎপাদন খরচ, দাম এসব নিয়ে ভাবনা থাকলেও আশার আলোয় আলোকিত কৃষকরা। কারণ গত সিত্রাং এর আঘাত নিয়ে চরম আতঙ্কিত ছিল এক প্রকার। কিন্তু সব কিছুই সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে তেমন কিছুই হয়নি। এজন্য কৃষকরাও অনেকটাই স্বস্তিত্বে। ফলে রোপা আমনের ফলন নিয়েও আশাবাদী সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও কৃষকরা।
বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ মাঠেই শীষে পাক ধরেছে। আবার কোন কোন মাঠে সবুজ শীষও লক্ষ করা গেছে। তবে এর পরিমাণ অল্প। কারণ উপজেলায় রোপা আমন ধানের পর রবি ফসলের চাষ হয় প্রচুর। এজন্য রোপা আমন আগাম রোপণ করে থাকে। কিন্তু এবার অবশ্য বৃষ্টির জন্য কিছুটা দেরিতে রোপণ হয়। বেশির ভাগ কৃষকরা সেচের পানিতেই রোপণ করে ফেলেন। যার কারণে বাড়তি খরচও গুণতে হয়েছে। মাঝে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে কৃষকরা।
চিরাং ইউনিয়ন এলাকার কৃষক মামুন আজিবুর জানান, ২৫ বিঘা জমিতে শুধু সেচের পানিতেই প্রায় ১ লক্ষ টাকা বাড়তি গুনতে হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে। রোয়াইলবাড়ি ইউপির কৃষক জামাল মিয়া জানান, তিন বিঘা জমির মধ্যে দুবিঘা সেচের পানিতে রোপণ। তারপর থেকে আর সেচ দেওয়া লাগেনি। আশা করছি ফলন ভাল হবে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ২০ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম শাহজাহান কবীর জানান, রোপণের সময় বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় কিছুটা দেরিতে হয়েছে রোপণের কাজ। অবশ্য রোপণের পরপরই বৃষ্টি হয় যা কৃষকদের মনে স্বস্তি এনে দেয়। এবারে ধান ক্ষেতে রোগ বালাই কম। যেখানেই রোগের কথা জানা গেছে সেখানেই দ্রুত পরামর্শ প্রদান করায় অনেক কম। একাধিক মাঠ দিবস এবং অভিযোগ আশার সাথে সাথে প্রতিকার সুব্যবস্থা। এজন্য ফলন ভালো হবে।
হেক্টর প্রতি ৫ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন ফলন ধরা হয়েছে। এর চেয়ে বেশি হবে কিন্তু কমবে না। আশা করা যায় এবছর ধানের চাহিদার চেয়েও ফলন বেশি হবে বলে অবহিত করেন এই কর্মকর্তা।
এসএম