কালীগঞ্জে খেজুর গাছের মিষ্টি রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

শাহ আলম, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২২, ০৪:০৫ পিএম
কালীগঞ্জে খেজুর গাছের মিষ্টি রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

খেজুর গাছের মিষ্টি রস সংগ্রহে কালীগঞ্জের গাছীরা এখন মহা ব্যস্ত। কালীগঞ্জ উপজেলার সর্বত্রই মধু বৃক্ষ খেজুর গাছ তোলার মহা উৎসব শুরু হয়েছে। কিছুদিন পরই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক মধু বৃক্ষ (খেজুর গাছ) ঘিরে গ্রামীণ জনপদে শুরু হবে উৎসব মুখর পরিবেশ। আসছে পুরো শীত মৌসুমে সৃষ্টি হবে এক নতুন আমেজ। তাই খেজুর গাছ থেকে সুমিষ্টি রস সংগ্রহের জন্য গাছ তোলা, চাঁচ দেওয়াসহ বিভিন্ন রকমের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কালীগঞ্জের গাছীরা।

ছোট বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছ অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে গাছ তোলা, চাঁচ দেওয়া ও গাছ কাটতে হয়। কোমরে মোটা রশি বেধে গাছে ঝুলে ঝুঁকি নিয়ে তাদের এ কাজ করতে হয়। পেশাদার গাছীদের তেমন কোন সমস্যা হয় না বলে জানিয়েছে গাছীরা। ভাদ্র-আশ্বিনের শুরুতে গাছ তোলা ও পরিচর্যা করার সঠিক সময়। তবে এবার ভাদ্র-আশ্বিন মাসে বৃষ্টি হওয়ায এবার খেজুর গাছ তোলা দেরিতে শুরু হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা খেজুরের রস, গুড় ও পাটালির জন্য খ্যাতি ছিল। ঝিনাইদহের খেজুরের গুড়, পাটালি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভাবে সরবরাহ হতো। দেশের বাইরে ও এর কদর রয়েছে। বর্তমানে খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। আগের মতো এখন আর মাঠ জুড়ে খেজুর গাছ দেখা যায় না। ঝিনাইদহ জেলার প্রতিটি গ্রামের মাঠে এবং রাস্তার দু’ ধার দিয়ে ও মেঠো পথের পাশে কিছু গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। কিছু দিনের মধ্যেই প্রতিটি ঘরে ঘরে খেজুরের রস দিয়ে পিঠা, পুলি, পায়েস তৈরির ধুম পড়বে। মিষ্টি গুড় অত্যন্ত উপকারী ইতি মধ্যে লোকজন গাছ কাটা গাছীদের সাথে যোগাযোগ শেষ করেছে। ভাল গুড়, পাটালীর আশায় অনেকেই অগ্রিম টাকা দিয়েছে গাছীদের। এ সব গাছীরা অগ্রিম টাকা নিয়ে দা, দড়ি, ঠুঙ্গি সহ গাছ কাটার বিভিন্ন উপকরণ তৈরির কাজ ইতি মধ্যে শেষ করেছে। শীত জেঁকে না বসলেও গাছীরা গাছ তোলা, চাঁচা, দা তৈরি, ঠুঙ্গি, দড়ি ও মাটির কলস (ভাঁড়) কেনার কাজ সেরে নিচ্ছে।

ঈশ্বরবা গ্রামের গাছী রহমত আলী জানান, এ বছর খেজুর গাছ তোলা শুরু করেছেন। রস,গুড় ও পাটালী তৈরি করে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি লাভবান হবেন বলে তিনি আশা করছেন। মধুপুর গ্রামের গাছী আমীর আলী জানান, খেজুর গাছ অনেক কমে গেছে। রস ও কম হবে । এ ছাড়া রস জ্বালাতে যে পরিমাণ জ্বালানী প্রয়োজন তাও পাওয়া যায় না। তবে যে খেজুর গাছ আছে দিয়েই এ পেশা ধরে রেখেছি। এ বার আমি ৪৫ টি গাছ কাটার জন্য ইতি মধ্যে গাছ তোলা ও চাঁচ দেওয়া শুরু করেছি।

কালীগঞ্জ উপজেলার চাঁচড়া গ্রামের ইউনুছ আলী জানান, সে এ বছর ৬০টি খেজুর গাছ কাটার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। তিনি জানান, রস জ্বালাতে আগের মত জ্বালানী পাওয়া যায় না বলে রস জ্বালাতে বেশ কষ্ট করতে হয়। তাদের জানা মতে কালীগঞ্জের গুড় ঢাকা, চিটাগাং সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ভাবে খেজুর গাছের বাগান গড়ে তুললে রস,গুড় ও পাটালীর চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব হবে। ফিরে আসবে এলাকার অতীত গৌরব। সম্ভাবনাময় এ অর্থনৈতিক খাতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আর জন সচেতনতা গড়ে তুলতে এলাকাবাসী জোর দাবী জানান।

এসএম