শতবর্ষী রেলওয়ে স্টেশন পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২২, ০১:৫৯ পিএম
শতবর্ষী রেলওয়ে স্টেশন পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়

ময়মনসিংহের ত্রিশাল অংশেই রয়েছে শতবর্ষী ৪ টি রেলওয়ে স্টেশন। এ শতবর্ষী রেলওয়ে স্টেশন গুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ার ফলে পড়ে আছে অযত্ন ও অবহেলায়। ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক এ স্টেশনগুলোর বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক ও জরাজীর্ণ। যাত্রী থাকলেও একটি সরকারী লোকাল ট্রেন ও বেসরকারী ট্রেন ব্যতিত স্টপেজ নেই কোন মেইল ট্রেনের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলায় সংস্কার কিংবা আধুনিকায়নের অভাবে স্টেশন গুলোর ভবন এখন ব্যবহার অনুপযোগী ও পরিত্যক্ত। এক সময় এসকল স্টেশনে নিয়মিতই স্টপেজ ছিল ট্রেনের। তারা সহজে ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্রগ্রাম, জামালপুর অঞ্চলে মালামাল আনা-নেওয়া করতো। হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ট্রেনের স্টপেজ। যাত্রী থাকলেও লোকাল ও বেসরকারি দু-একটি ট্রেন ছাড়া স্টপেজ নেই অন্য কোন মেইল ট্রেনের।

সরেজমিনে দেখা যায়, ত্রিশাল উপজেলার অংশেই রয়েছে ফাতেমা নগর, আহাম্মদ বাড়ী, আউলিয়া নগর ও ধলা বাজার নামক চারটি রেলওয়ে স্টেশন। এ শতবর্ষী চারটি রেলওয়ে স্টেশনগুলো মধ্যে ফাতেমা নগর ও আউলিয়া নগর স্টেশন দুটি পুরাতন ভবনেই চালাচ্ছেন তাদের কার্যক্রম। আর বাকী দুই স্টেশনে নেই কোন স্টেশন মাস্টার। কালের বিবর্তনে এই স্টেশনগুলো আসল রুপ-সৌন্দর্য ও জৌলুস হারিয়েছে। এই চার স্টেশনে ভাওয়াল এক্সপ্রেস নামে একটি লোকাল ট্রেন ও মহুয়া কমিউটার, বলাকা কমিউটার নামে বেসরকারী ট্রেন ছাড়া, নেই কোন মেইল ট্রেনের স্টপেজ। স্টেশনে রয়েছে অনেক যাত্রী। শতবর্ষী এ স্টেশন গুলোর মধ্যে ফাতেমা নগর ও আউলিয়া নগর স্টেশন দুটির প্লাট ফরমের সংস্কার করা হলেও পুরাতন জরার্জীন ভবনেই চালাতে হচ্ছে কার্যক্রম।

প্লাটফরম উচু করার ফলে ভবনগুলো পড়ে আছে নিচুতে। একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় রুমগুলো। স্টেশনের পাশেই অবৈধ ভাবে দখল করে বসানো হয়েছে অনেক দোকান। কে বসিয়েছে জানেননা স্টেশন মাস্টার। আহাম্মদবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের অবস্থা খুবই নাজুক। দেখে মনে হবে এটি কোন পরিত্যাক্ত ভবন। ভবনে গজিয়েছে লতা,পাতা ও গাছের শেকড়। স্টেশন রুম থাকলেও তা রয়েছে তালাদ্ধ অবস্থায়। নেই কোন স্টেশন মাস্টার। যাত্রী বসার নেই কোন ব্যবস্থা। পাশের দোকানে বসে লোকাল ট্রেনের জন্য অবস্থান করছেন যাত্রীরা।

স্থানীয়রা জানায়, এক সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও পণ্য পরিবহনে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে রেলওয়ে স্টেশনের কদর ছিল। এখন শতবর্ষী স্টেশন ভবনগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্টেশন মাস্টারসহ প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যাত্রীরা। শুধুই কাগজে-কলমে স্টেশন গুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা হয়েছে।

এ স্টেশনগুলো ডিঙ্গিয়ে প্রতিদিন ঢাকা, জামালপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, মহনগঞ্জ রোডে ৮-১০টি ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু এ স্টেশন গুলোতে ভাল কোন ট্রেনের স্টপেজ নেই। ট্রেনে ঢাকা বা দুরে কোথাও যেতে হলে ট্রেনের জন্য যেতে হয় ময়মনসিংহ বা পাশের উপজেলা গফরগাঁওয়ে। ফলে স্টেশনগুলো জীর্ণদশা ও দুরবস্থায় যাত্রীদেরও পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। স্টেশনে ওয়েটিং রুম, ওয়াশ রুমসহ যাত্রী সেবার নেই কোন বালাই। পর্যাপ্ত বাতি ও নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় রাতের বেলায় স্টেশনে নেমে আসে ভুতুড়ে অন্ধকার ও নিস্তবতা। আধুনিকায়নসহ মেইল ট্রেনের স্টপেজ ও হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার দাবি এলাকাবাসীর।

ফাতেমা নগর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কামাল আহমেদ বলেন, এ স্টেশনে প্রচুর যাত্রী রয়েছে। কিন্তু লোকাল ট্রেন ছাড়া আর কোন মেইল ট্রেন এখানে থামে না। আর স্টেশনের অবস্থা অনেক খারাপ।

কেএস