২৪ ঘণ্টায় মাত্র এক ট্রেন

জৌলুস হারাচ্ছে নান্দাইল রোড রেলস্টেশন

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২২, ০১:৪৩ পিএম
জৌলুস হারাচ্ছে নান্দাইল রোড রেলস্টেশন

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার এক প্রান্ত ভেদ করে অন্যপ্রান্ত দিয়ে বের হয়ে গেছে ময়মনসিংহ-ভৈরব রেলপথ। এরই মধ্যে উপজেলার দুটি অংশে রয়েছে নান্দাইল রোড রেলওয়ে স্টেশন ও মুশুলী স্টেশন। একসময় উক্ত দুই স্টেশনে লোকসমাগম ছিল দেখার মতো। গ্রামের সাধারণ মানুষ অল্প খরচে ও নিরাপদে গমনের জন্য রেলপথ ব্যবহার করতো। প্রতিদিনই দিনে-রাতে আপ এবং ডাউনে ১০টি ট্রেন চলাচল করত এবং প্রতিটি ট্রেনই এ দুটি ষ্টেশনে যাত্রা বিরতি দিত। বর্তমানে সেই জৌলুস আর নেই। কিন্তু সময় অতিক্রমের সাথে সাথে কমে গেছে ট্রেনের সংখ্যা। কোন ট্রেন থামে না বলে বন্ধ হয়ে গেছে মুশুলী রেলওয়ে স্টেশন। অপরদিকে নান্দাইল রোড রেলওয়ে স্টেশনে দিনে-রাতে মাত্র একটি ট্রেন চলাচল করে। ট্রেন ও জনবল সংকটে থাকায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সরকার। এতে করে বন্ধের পথে রয়েছে উপজেলা সদরের সন্নিকটে থাকা নান্দাইল রোড রেলস্টেশনটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি আন্তঃনগর ট্রেন থামার ব্যবস্থা করতে পারলে নান্দাইল রোড স্টেশনটি পুরোপুরি সচল হত।

জানা যায়, উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়নে অবস্থিত নান্দাইল রোড রেলওয়ে স্টেশন এবং অপরটি মুশুল্লী ইউনিয়নে অবস্থিত মুশুল্লী রেলওয়ে স্টেশন। ব্রিটিশ আমলে এ দুটি রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের পর তেমন কোনো উন্নয়নের মুখ দেখেনি স্টেশনগুলো। সম্প্রতিকালে শুধুমাত্র নান্দাইল রোড রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীসাধারণের উঠা-নামার জন্য শেডহীন একটি পাকা ফ্লাটফর্ম ও একটি সিগন্যাল বক্স তৈরি করা হয়েছে। তবে দুটি স্টেশনের একটিতেও নেই কোনো উন্নতমানের বিশ্রামাগার ও পানীয় ব্যবস্থা। সেই ব্রিটিশ আমলে নির্মিত পুরাতন জরাজীর্ণ অবকাঠামো দিয়েই চলছে রেলওয়ে স্টেশনের কার্যক্রম। তবে নান্দাইল রোড রেলওয়ে স্টেশনে কিছু সংখ্যক লোকবল রয়েছে। যার ফলে এখনও রেলওয়ে যাত্রীসাধারণের কিছুটা সমাগম রয়েছে। উক্ত দুটি স্টেশনের সাথেই রয়েছে একটি করে রেলক্রসিং। গেইট ম্যানের জন্য রয়েছে একটি করে ছোট পাকা ঘর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কর্তৃপক্ষ এ লাইনে ট্রেন চলাচল ৮টি থেকে কমিয়ে ২টিতে নামিয়ে এনেছেন। বর্তমানে ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম মেইল নামে দুটি ট্রেন চলাচল করলেও মুশুলী স্টেশনে কোনটিই যাত্রা বিরতি দিচ্ছেনা। অন্যদিকে আন্ত:নগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি নান্দাইল রোড স্টেশনেও বিরতি দিচ্ছেনা। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনটি (৩৭-আপ) রাত ৩/৪ টার দিকে এবং একই ট্রেনটি (৩৮-ডাউন) সকাল সাড়ে ৯টা-১০ টার দিকে নান্দাইল রোড স্টেশনে যাত্রা বিরতি দিচ্ছে। একটি মাত্র ট্রেন চলাচল করায় সকালে কিছু যাত্রী থাকে, কিন্তু গভীর রাতে বিরতি দেওয়ায় কোন যাত্রী পায়না। ফলে এ স্টেশনে চুক্তি ভিত্তিক একজন স্টেশন মাস্টারসহ রেলের মোট সাতজন কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন। একমাত্র বিশ্রামাগারটি লাইন মেরামতকারী শ্রমিকদের দখলে। কোথাও কোন জনমানবের অস্তিত্ব নাই।

পাশের চা দোকানদার আব্দুল জলিল জানান, এক সময় এ স্টেশনে প্রচুর যাত্রী সমাগম হলেও এখন আর হয়না।

নান্দাইল রোড বাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই মুশুলী স্টেশনটি বন্ধ এবং নান্দাইল রোড স্টেশনটিও বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

নান্দাইল রোড রেল স্টেশনের কর্মরত স্টেশন মাস্টার আব্দুল কাদির জানান, তিনি চুক্তিভিত্তিকে এ স্টেশনে দায়িত্ব পালন করছেন। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এখানে ৮১ হাজার ৪৭৭ টাকা আয় হয়েছে। আর বেতন ভাতা বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, এ লাইনে চলাচলকারী আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি এ স্টেশনে যাত্রা বিরতি দিলেই যাত্রীর সংখ্যা এবং আয় দুটিই বেড়ে যেত। স্টেশনটি সচল হত।

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল মনসুর বলেন, ‘রেলকর্র্তৃপক্ষ কোন স্টেশন সচল রাখবে বা রাখবেনা সেটা তাদের বিষয়, এখানে আমাদের কিছু করনীয় নেই’।

বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা ঢাকা, এস এস সলিমুল্লাহ বাহারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে জানান, ওই দুটি স্টেশন সচলের বিষয়ে আপাতত কোন পরিকল্পনা নাই।

এসএম