ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে মোঃ শিমুল নামের এক পুলিশ সদস্যর বিরুদ্ধে। চাঁদা দাবির অভিযোগে স্থানীয় জনতা ওই পুলিশ সদস্য গণধোলাই দিয়ে তাকে স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
ভাঙ্গা থানা পুলিশের দাবি ওই পুলিশ সদস্য শিমুল স্থানীয় এক তরুণ-তরুণীকে প্রকাশ্যে অশালিন অবস্থায় দেখে তাদের ধমক দেওয়ার কারণে শিমুল স্থানীয়দের হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হন।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরের দিকে ভাঙ্গা হাইওয়ে ইন্টারশেকসনের ফ্লাইওভার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে রাত নয়টার দিকে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, ভুয়া পুলিশ পরিচয়ে দীর্ঘদিন যাবত ভাঙ্গায় ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ভাঙ্গা গোলচত্ত্বর দক্ষিন বঙ্গের অন্যতম প্রবেশদার। প্রায়ই ভাঙ্গার ইন্টার সেকশনসহ শহরের গুরুত্বপূর্ন মহাসড়ক এলাকায় ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে।
প্রতক্ষ্যদর্শী অটো-গাড়ির ম্যানেজার সুরুজ মোল্লা জানান, হঠাৎ চেচামেচির শব্দ শুনে ফ্লাইওভারের উপরে এগিয়ে গিয়ে দেখি ২০ থেকে ৩০ জন লোক একজনকে মারপিট করছেন। পরবর্তীতে শিমুল নিজেকে পুলিশের কনষ্টেবল পরিচয় দেন। পরে সেখান থেকে শিমুলকে ভাঙ্গা ট্রাফিক পুলিশ বক্সে নেওয়া হয় এবং থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক( এএসআই)পরিতোষকে খবর দিয়ে শিমুলকে ভাঙ্গা থানায় সোপর্দ করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা, অমিত মালো অভিযোগ করে জানান, সকালে গোলচত্বরে ঘোরা-ফেরা করছিলাম, আমার বাড়ি-ঘর কোথায় জানতে চান শিমুল। আমি পরিচয় দিলে, সে আমার কাছে এক হাজার টাকা চান। আমি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় সে আমারে ধইরা শুধু-শুধু চড়-থাপ্পর মারেন এবং থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। আমি তার পা ধরে আমাকে থানায় নিয়েন না বলে বারবার অনুরোধ করি। আমার চিৎকার শুনে একপর্যায়ে আশ-পাশের লোকজন এগিয়ে আসে এবং শিমুলকে মাধধর করেন।
ওই এলাকার ভ্যানচালক আলামিন, মজিবর শেখ জানান, ওই দিক দিয়ে ভ্যান নিয়ে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে, পুলিশ পরিচয় দিয়ে মহাসড়কে চলাচলরত কয়েকটি অটো-গাড়ি থেকে টাকা আদায় করেন শিমুল। মাছ ব্যবসায়ী হৃদয় জানান, গত সাত মাস আগে পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় শিমুল ও তার আরও এক সহযোগি নওয়াপাড়া ষ্ট্যান্ড থেকে তার একটি মোটর সাইকেল ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মোঃ মারুফ হোসেন জানান, শিমুল আর, আর, এফ, এর একজন পুলিশ সদস্য। শিমুলের বাড়ি নরসিংদী জেলার পলাশ থানায়। তার শশুর বাড়ি ভাঙ্গার হামিরদী গ্রামে। তিনি সাময়িক বরখাস্ত রয়েছেন।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)মোঃ জিয়ারুল ইসলাম এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয়দের সাথে বরখাস্ত পুলিশ সদস্য শিমুলের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে কোন পক্ষের কোন লিখিত অভিযোগ না থাকায় এ বিষয়ে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। গতকালই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি শিমুলের বরাত দিয়ে আরও বলেন, ভাঙ্গা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গাড়ির অপেক্ষায় ভাঙ্গা ইন্টার সেকশনে অপেক্ষা করছিলেন শিমুল। এসময় স্থানীয় কিছু লোকজনের সঙ্গে তার ভুল বুঝা-বুঝির ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) হেলাল উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, শিমুলের শশুর বাড়ি ভাঙ্গায়। তিনি ভাঙ্গা থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য ভাঙ্গা ইন্টার সেকশনে গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন। তখন স্থানীয় অমিত মালো ও তার বান্ধবীকে মহাসড়কের পাশে প্রকাশ্যে অশালীন অবস্থায় দেখতে পান শিমুল। পরে এর প্রতিবাদ করলে অমিত মালোর কয়েক বন্ধুসহ স্থানীয়দের রোষানলে পড়েন শিমুল। এ সময় স্থানীয়রা তাকে মারধর করেন। খবর পেয়ে শিমুলকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। এ বিষয়ে কোনপক্ষের কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে সোমবার রাত ৯ টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এআই