সভাপতি হতে ছেলেকে তিন স্কুলে ভর্তি করান বাবা

নেত্রকোনা প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২২, ০৫:৫০ পিএম
সভাপতি হতে ছেলেকে তিন স্কুলে ভর্তি করান বাবা

মো. সাদ একই সময়ে ভর্তি শহরের দুটি বিদ্যালয়ে। কিন্তু বাবার স্বপ্ন গ্রামের বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার। তাই একটি স্কুল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে সাদকে ভর্তি করেন গ্রামের স্কুলে। এতে বাবা মোহাম্মদ শফিউল কবিরের সভাপতি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়। চলতি বছরের এপ্রিলে তিনি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের গাগলাজুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল কবিরের বিরুদ্ধে এমন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য টিটু বেগ এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিভিত অভিযোগ দিয়েছেন।

মোহনগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বিশ্বজিৎ সাহা বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাটি অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগ ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মোহাম্মদ শফিউল কবিরের ছেলে মো. সাদ (৮) শহরের দৌলতপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। শিশু শ্রেণি, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি সে এখানেই নিয়মিত পড়াশোনা করছে। এই বিদ্যালয়ে সব শ্রেণিতেই সাদের রোল নম্বর-২। ঠিক এই সময়ে শহরের বেসরকারি ন্যাশনাল প্রি-ক্যাডেট স্কুলেও ভর্তি হয়ে প্লে, নার্সারি ও প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি রয়েছে সাদ। ওই কিন্ডার গার্টেনে সাদের রোল নম্বর-৪৭।  সরকারি প্রাথমিকে মোটামুটি রেগুলার ক্লাশে উপস্থিত থাকলেও ন্যাশনাল প্রি-ক্যাডেট স্কুলে অনেকটাই অনুপস্থিত। পরে ম্য্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য চলতি বছরের শুরুতে ন্যাশনাল প্রি-ক্যাডেট স্কুলে থেকে ছাড়পত্র নিয়ে গাগলাজুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে সাদকে ভর্তি করার তার বাবা। সেখানে তার রোল নম্বর-৪৩। গত এপ্রিলে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন সাদের বাবা মোহাম্মদ শফিউল কবির।

কিন্তু সম্প্রতি এ ঘটনা প্রকাশ হয়ে গেলে বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দৌলতপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেও ছেলের ছাড়পত্র নেন তিনি। তবে শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন এতেও শেষ রক্ষা হবে না। শফিউল কবিরকে ছাড়তে হবে সভাপতির পদ।

দৌলতপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক  মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, সাদ শুরু থেকেই আমাদের স্কুলের ছাত্র। গত বুধবারও আমাদের স্কুলের ক্লাশে সে উপস্থিত ছিল। আজ বৃহস্পতিবার তার বাবা ছাড়পত্র নিয়েছেন।

গাগলাজুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমন আহমেদ বলেন, ন্যাশনাল প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ছাড়পত্র জমা দিয়ে সাদ চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমার স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তার বাবা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। গত জুনে এ কমিটি গঠন করা হয়।

ন্যাশনাল প্রি-ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ ফারুক আহমেদ বলেন, সাদ প্লে, নার্সারি ও প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত আমার স্কুলেই ভর্তি ছিল। তবে ক্লাশে সে অনিয়মিত ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তার বাবা সাদের ছাড়পত্র নিয়েছেন। পরে কোথায় ভর্তি হয়েছে জানি না।

গাগলাজুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানিজং কমিটির সভাপতি ও শিক্ষার্থী সাদের বাবা মোহাম্মদ শফিউল কবির বলেন, এসব অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক। শুধুমাত্র আমাকে হয়রানি করার জন্য করা হয়েছে। যথাযথ নিয়মে ছাড়পত্র নিয়েই আমার ছেলেকে গাগলাজুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে একই প্রতিষ্ঠানের আমি সভাপতি হয়েছি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, এমন কাজ সম্পূর্ণ অনিয়ম। প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনা প্রমাণিত হলে মোহাম্মদ শফিউল কবিরকে সভাপতির পদ ছাড়তে হবে। এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেএস