মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় চলছে আমন ধান কাটার মহোৎসব ।এই নতুন ধানকে ঘিরে ঘরে ঘরে চলছে নবান্ন উৎসব। আমনের বাম্পার ফলন ও দাম ভালো দাম পেয়ে বেজায় খুশি কৃষক। হেমন্তের শিশিরে ভিজে থাকা ধান কাটতে ভোর থেকে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। চারদিকে সোনালি ধান নিয়ে হইচই । ধান কাটার পর জমিতেই মাড়াই হচ্ছে।
এ বছর আমনের মণ প্রতি উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৫০০ টাকা। আর কাঁচা ধান বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকায়। নতুন ধান পেয়ে কৃষকের ঘরে ঘরে চলছে এখন নবান্ন উৎসব। আমনের ম ম ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছে। বাড়িতে বাড়িতে বেড়াতে অতিথি আসছে। পিঠাপুলি ছাড়াও রান্না হচ্ছে খিচুড়ি। কৃষি পরিবারগুলো এখন এক বিশেষ সময় পার করছে। সেই সঙ্গে উৎসবের শক্তি নিয়ে তৈরি হচ্ছে আলু রোপণের জন্য। সামনে যে আরও বড় কর্মযজ্ঞ রয়েছে।
এদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, আলুর চাষের পাশাপাশি ভুট্টা ও সরিষা চাষ করতে হবে। কারণ চাহিদার চেয়ে দেশে বেশি আলু উৎপাদন হওয়ায় তাতে ঝুঁকি রয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী এবার এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবে না, তাই রবি মৌসুমের ব্যাপক প্রস্তুতিও আছে কৃষি পরিবারগুলোতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে ধান নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কিষানিরা। বিক্রমপুরের ঐতিহ্য অনুযায়ী আমন নিয়ে পিঠাপুলির হিড়িক পড়ে গেছে। চারদিকে কৃষি পরিবারগুলোতে চলছে আনন্দের ঢেউ। উন্নতমানের বীজ, পরিমিত সার ব্যবহার এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক দামও পাচ্ছে অনেক বেশি।
কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, এ বছর জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে তাদের জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করেন। এখন পুরোদমে ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে ধান মাড়াই করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষক আনোয়ার মুন্সী জানান, ভালো ফসল উৎপাদনের স্বপ্ন নিয়েই তারা এ বছর জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করেন। বর্ষার সময়ে নিয়মিত বৃষ্টি হওয়াতে তাদের জমিতে কোনো প্রকার পানি দিতে হয়নি। বর্তমানে জমিগুলোতে হৃষ্টপুষ্ট ধান দেখে কৃষকদের মুখে হাঁসি ফুটেছে। অধিকাংশ কৃষকই জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলেছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানায়, রোপা আমন ধান আবাদে এ বছর প্রতি হেক্টর জমি থেকে ৪ দশমিক ৫০ টন ধান পাচ্ছেন কৃষকরা।
মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. খুরশীদ আলম আমার সংবাদকে বলেন, এ বছর জেলায় ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ১ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে কৃষকরা রোপা আমন ধানের আবাদ করেছে। এর মধ্যে শুধু সিরাজদিখান উপজেলায়ই ১৮০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। জেলায় উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৮ হাজার টন ধান, যা অন্যান্য বছরের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। দিন দিন এখানে রোপা আমন আবাদে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলন ভালো পাওয়াতে কৃষকরা প্রতি বছর বেশি বেশি পরিমাণ জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ করছেন।
কৃষক আলী আকবর জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল তাই ধানে বাম্পার ফলন হয়েছে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছিল। এই ধানের জমি পানিতে ডুবলেও ধান গাছের সমস্যা হয় না। তবে পেকে যাওয়ার পর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া ধান আবাদে কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বলে। আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা উঁচু কিংবা নিচু সব ধরনের জমিতেই এ বছর রোপা আমন ধানের আবাদ করেছেন। এ ধানের গাছ পানিতে ডুবে গেলেও কোনো সমস্যা নেই। কৃষকরা তাদের যার যার জমির ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন জাতের ধানের বীজ বপন করেন।
বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা জানান, গত দুই বছর আগে সিরাজদিখান উপজেলায় ২ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ হতো। বর্তমানে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে এ ধান। প্রতি বছর এই ধানের আবাদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সিরাজদিখান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ শুভ্র আমার সংবাদকে বলেন, সিরাজদিখানের কৃষকরা এবার ব্যাপকভাবে আমন ধানের আবাদ করে সফল হয়েছেন। কৃষকরা ইতোমধ্যে অধিকাংশ জমির ধান ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। উৎপাদনের হারও ভালো। কৃষি বিভাগের তদারকি ও কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা ও পরিমিত সার ব্যবহারের সুফল পাচ্ছে কৃষক। ধানসহ যে কোনো ফসল উৎপাদনে কৃষকদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এসএম