৭০টি বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে বিশ্বদরবারে নান্দাইলের সানজিদা

শাহজাহান ফকির, নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২২, ০২:১৪ পিএম
৭০টি বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে বিশ্বদরবারে নান্দাইলের সানজিদা

বিশ্ব দরবারে প্রশংসায় ভাসছে নান্দাইলের সানজিদা। তাঁর পূর্ণ নাম মোছা. সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নে। ঝাউগড়া গ্রামের মো. আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া সোহেল ও লিজা আক্তার দম্পতির মেয়ে। বর্তমানে সে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। শৈশব থেকে কাল থেকেই সানজিদা ছিল একজন প্রতিবাদী মেয়ে। সততা ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলা ছিল তাঁর জীবন সংগ্রাম। মাধ্যমিকে পড়াশুনা করার পাশাপাশি সহপাঠীদের নিয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে এগিয়ে যেতো। অবশেষে তাঁর এ প্রতিবাদী আচরণ ও সামাজিক কর্মকান্ড আজ বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ^দরবারে সানজিদা ইসলাম এক অনন্য নাম।

সম্প্রতিকালে বিবিসি কর্তৃক প্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় উঠে এসেছে তাঁর নাম। প্রায় ৭০টি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করে বিবিসি’র তালিকা সানজিদা ইসলাম ছোঁয়ার স্থান ২১তম। যেখানে তাঁর পূর্বের নামটি ভারতের বলিউড জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রিয়াংকা ছোপড়ার নাম।

বিবিসি’র উক্ত তালিকা কাতারের দোহাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার ফিলিস্তিনি সাংবাদিক প্রয়াত শিরিন আবু আকলেহ, সিরিয়ার শারীরিক প্রতিবন্ধী দৌড়বিদ দিমা আক্তার, ইরানি নায়িকা জার আমির ইব্রাহিমি, আফগানিস্তানের শিক্ষার্থী ফাতিমা আমিরি, মিয়ানমারের চিকিৎসক আই নাইন তো, রাশিয়ার সাংবাদিক তাইসিয়া বেকবোলাটোভা সহ আরও কৃতিত্ববান নারীর নাম।

জানা গেছে, সানজিদা ইসলাম সহপাঠীদের নিয়ে ‘ঘাস ফড়িং’ নামক একটি সামাজিক সংগঠন তৈরী করে বাল্যবিয়ে বন্ধে ঝাপিঁয়ে পড়তো। সে নিজেই প্রায় ৫০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছে বলে জানা গেছে। প্রশাসনও তাকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করেছে। সানিজদা ইসলামের এসব সামাজিক কর্মকান্ডের খবর ঢাকার জাতীয় পত্র-পত্রিকা সহ বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমে উঠে আসে। এক পর্যায়ে তা বিবিসি যাছাই-বাছাই করে প্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় তাঁর নাম ২১তম স্থানে সুযোগ করে দেয়।

এ বিষয়ে সানাজিদা ইসলাম ছোঁয়া জানান, গত ৬ ডিসেম্বর সকালে একটি নম্বর থেকে বিবিসির পরিচয় দিয়ে বলা হয়, আমি বিশ্বের ১০০ নারীর তালিকায় আছি। এ খবর শুনে অবাক হয়ে যাই। প্রথমে বিষয়টি আমি বুঝতে পারিনি এরপর আমার মোবাইল ফোনে একটি লিংক পাঠানো হয়। এটা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। আমার নামের আগে আছে বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াংকা চোপড়ার নাম। এটা অবিশ্বাস্য।

সে আরও জানান, তাঁর মা লিজা আক্তারের বাল্যবিবাহ হয়েছিল। বাল্যবিয়ের কুফল তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। তাঁর সহপাঠীরা মাঝে মধ্যে বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে তা দেখে নিজেই সহপাঠীদের নিয়ে গঠন করেন ঘাস ফড়িং সংগঠন। অনেক সময় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। স্থানীয় সাংবাদিকরাও তাদেরকে সহযোগীতা করেছেন। এতে অনেক সময় হুমকি-ধমকির মধ্যেও থাকতে হয়েছে। কারণ একটি বাল্যবিয়ে বন্ধের পর অনেকেই এটাকে ভালো চোখে দেখে না। এরপরও সে চালিয়ে গেছে। এই সফলতার জন্য ঘাসফড়িং সংগঠন টিমের ৭জনকে সহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় সানজিদা।

এআই