সপ্তাহে অফিসে উঁকি দেন না খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা। অফিসের রেজিষ্ট্রার মেইনটেইন, চাল বিলি আদেশে (ডিও) স্বাক্ষর, খাদ্যবান্ধব ও ওএমএস চালের চালান পাশ, জেলায় ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠানো সহ সব কাজই করেন পরিচ্ছন্নকর্মী আমির হোসেন।
আমির হোসেন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের অফিসে দৈনিক হাজিরা (মাষ্টার রোল) ভিত্তিতে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কর্মকরত।
সরকারি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পরিচ্ছন্নকর্মী সই করা ও অফিস চালানোর ঘটনায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সোমবার (১২ ডিসেম্বর) নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার চেয়ারে বসে তার অফিসিয়াল কম্পিউটার পরিচালনা ও সরকারি রেজিষ্ট্রারের স্বাক্ষররত অবস্থার কয়েকটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে সমালোচনা শুরু হয়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন সপ্তাহে দুই-একদিন মন চাইলে অফিসে আসেন। অধিকাংশ সময় বাড়িতে অবস্থান করেন। তার অবর্তমানে চাল বিলি আদেশে (ডিও) স্বাক্ষর, খাদ্যবান্ধব ও ওএমএস চালের চালান পাশ, জেলায় ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠানো সহ সব কাজই করেন পরিচ্ছন্নকর্মী আমির হোসেন। এক্ষেত্রে কর্মকর্তার স্বাক্ষর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তিনি নিজেই করেন। এলাকায় ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলমান থাকলেও কখনো এসবে তদারকি করেন না খাদ্য কর্মকর্তা। সপ্তাহে যেদিন অফিসে আসেন সেদিনই পুরো সপ্তাহের হাজিরায় স্বাক্ষর করেন কর্মকর্তা দেলোয়ার। তার এমন উদাসীনতায় উপজেলায় খাদ্য কর্মর্সচিতে নানা অনিয়ম দেখা দিয়েছে। দ্রæত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।
সরেজমিন ঘুরে এলাকাবাসীর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে, নভেম্বর মাসের ২৩ তারিখ থেকে খাদ্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের অফিসে ঘুরে তিন দিন তাকে পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জানতে ফোন দিলে ছুটিতে আছেন বলে জানান তিনি। তবে মাসে কয়দিন ছুটি আছে এ বিষয়ে নিদৃষ্ট করে কিছু তিনি বলতে পারেননি।
ওএমএম এর দুইজন ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খাদ্য কর্মকর্তা প্রায়ই অফিস করেন না। তার এমন অবহেলার জন্য গত মাসে দুইদিন কোন চাল বিতরণ করতে পারিনি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এমদাদুল ইসলাম খোকন বলেন, খাদ্য কর্মকর্তার অফিসের সরকারি গুরুত্বপূর্ন নথিতে ঝাড়ুদার স্বাক্ষর করেন। এটা বিরাট অনিয়ম। শুনেছি কর্মকর্তার কম্পিউিটার চালনা সহ অফিসের সবকিছু তার হাতেই চলে। এর কঠিন বিচার হওয়া দরকার। এদিকে ওএমএস এর চাল বিতরণে নানা অনিয়ম হচ্ছে কর্মকর্তা অফিস না করায় এসব দেখার কেউ নেই। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এসব বিষয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী আমির হোসনেকে প্রশ্ন করলে নিবর থেকে শুনে তিনি এর কোন জবাব দেননি।
গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মোতাকাব্বির খান প্রবাস বলেন, স্যার (খাদ্য কর্মকর্তা) প্রায়ই অফিসে আসেন না। ওএমএস সহ বিভিন্ন কর্মসূচির চালের বিলি আদেশ (ডিও) সই করার কেউ থাকে না। পরে কোন একদিন এসে তিনি ডিও’তে সই করেন। যদি সই ছাড়া চাল না দেই তাহলে চাল বিতরণ বন্ধ থাকবে। এদিকে স্যার না আসায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী আমির হোসেনই অফিসের সবকিছু দেখে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন তার অফিসের পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে অফিস সহায়ক বলে পরিচয় দেন। প্রথমে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেও পরে এক পর্য়ায়ে অবশ্য আমির পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলে স্বীকার করেন। তবে তার দাবি আমির কোন অফিসের ফাইলে স্বাক্ষর করে না। আমি অফিসের এসে একত্রে সব ফাইলে স্বাক্ষর করি। হাজিরা সহ চালের বিলি আদেশে অগ্রীম বা দুই-চারদিন পরে স্বাক্ষরের নিয়ম আছে বলে জানান তিনি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের কাছে এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি খাদ্য কর্মকর্তার পক্ষে অবস্থান নেন। অনিয়মের প্রমাণ আছে বললে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, অফিসে স্টাফ সংঙ্কট তাই ঝাড়ুাদার দিয়ে কাজ করানো হয়। আমাদের চাকরি তাহলে আপনারাই করেন।
কেএস