ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ৫নং গাংগাইল ইউনিয়নের গয়েশপুর আর্টকলা গ্রামে হালিমা আইয়ূব বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক এক ছাত্রীকে (১১) যৌন হয়রানি করার ঘটনা ঘটেছে।
উক্ত ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি অসাধু চক্র। চক্রটি ঘটনাটিকে আড়াল করতে ছাত্রীর স্বজনদেরকে চাপের মুখে রেখে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে রাতের আধারে স্থানীয় সালিশ বসায়।
সালিশে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ছাত্রীর স্বজনদের হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে একতরফা সালিশ দরবার শেষ করে দেয় এবং এ বিষয়ে কোথাও বিচার প্রার্থী না হওয়ার জন্য ছাত্রীর পরিবারকে হুমকী প্রদান করে।
জানা গেছে, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের নাম জহির রায়হান। তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নান্দাইল শাখার একজন কর্মী। এ ঘটনার পরপরই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে সংগঠন। বিগত ৭/৮ বৎসর যাবত হালিমা আইয়ূব বালিকা বিদ্যালয় নামে প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করে। পরবর্তীতে অত্র প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত করে হালিমা আইয়ূব মাদ্রাসা নামে আরও একটি কওমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করে। এছাড়া জহির রায়হান গত ইউপি নির্বাচনে হাতপাখা প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করে জামানত হারিয়েছেন।
স্থানীয় ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) একই ইউনিয়নের মধ্যগয়েশপুর গ্রামের পিতৃহারা এক কন্যা অত্র বিদ্যালয়ের ছাত্রীকে স্পেশাল পড়াশোনার নাম করে মুখমণ্ডলসহ গায়ে হাত দিয়ে যৌন হয়রানি করে। পরে ছাত্রীটি তার গায়ের ওড়না ফেলে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে বিষয়টি ওই ছাত্রী তার পরিবারের লোকজনকে জানায়।
এ বিষয়টি যাতে করে প্রকাশ না হয়, সেজন্য অভিযুক্ত জহির রায়হান প্রভাবশালী হওয়ায় তার লোকবল দিয়ে ছাত্রীর পরিবার-পরিজনকে চাপের মাধ্যমে মুখ বন্ধ রাখে। পরে ওইদিন রাতেই স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় বসে তা একতরফা বিচার করে তা শেষ করা হয়। ঘটনার পরদিন থেকে ওই ছাত্রী ওই বিদ্যালয়ে যায় না। ছাত্রীটি পরীক্ষা ছেড়ে দিয়ে বৃহস্পতিবার স্থানীয় অন্য একটি কওমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভর্তি হয়।
এ ঘটনায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রীর পরিবার পরিজনের পক্ষ থেকে জানায়, প্রধান শিক্ষক ক্ষমা চেয়েছে। আমরা তাকে মাফ না করলেও মাফ করে দিয়েছি মেয়ের কথা চিন্তা করে।
অভিযুক্ত শিক্ষক জহির রায়হান বলেন, এটাতো বলা শেষ, অনেক আগেই বলে ফেলেছি, এটা নিউটল হয়ে গেছে। এখন নতুন করে আবার কি বলতে চাইতেছেন? এই কথা বলেই সেলফোনটি ঢাকাস্থ এক সাংবাদিক পরিচয়ে অন্যজনের কাছে ফোনকলটি ধরিয়ে দেন। তিনি এ সংবাদটি পরিবেশন না করার অনুরোধ জানান বলে ফোন রেখে দেন।
অপরদিকে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক কওমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক জহির রায়হান একজন ইংরেজি শিক্ষক সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে কোন সম্পৃক্ততা নাই। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক সংবিধান ব্যতিরেখে অনুমতিহীন কওমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। এছাড়া শুনেছি ইতিমধ্যে তার এরকম অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য ইসলামী সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
নান্দাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, এ বিষয়ে আমাদের জানা নেই। তবে কোন অভিযোগ পেলে বিষয়টি দেখবো।
এসএম