হারিয়ে যেতে বসা গ্রামীণ ঐতিহ্য পিঠাপুলির সাথে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং পিঠার স্বাদ ভুলতে বসা বড়দের পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে ব্যতিক্রমী গ্রামীণ পিঠা উৎসব ও ঢাকাইয়া কেরানীগঞ্জবাসীর মিলন মেলা হয়ে গেলো ঢাকার কেরানীগঞ্জে। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এ উৎসব ইতোমধ্যে পরিচিতি লাভ করেছে দক্ষিণ এশিয়ার সব চেয়ে বড় পিঠা উৎসব হিসেবে। এবারের উৎসবে প্রায় দশ হাজার লোক স্বাদ নেয় নানা ধরনের ৪০ হাজার পিঠার।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেল ৩ টায় উপজেলার আটিবাজারস্থ ছায়ানীড় কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকাইয়া কেরানীগঞ্জ সমিতির আয়োজনে উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা জেলা যুদ্ধকালীন কমান্ডার ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসিন মন্টু।
পিঠা উৎসব উপলক্ষে উদ্বোধনের আগেই উপজেলার নানা প্রান্ত থেকে আটিয়াজারস্থ ছায়ানীড় কমিউনিটি সেন্টারের আশেপাশে জড়ো হতে থাকে নানা বয়সী হাজার হাজার মানুষ। উদ্বোধনের পর আগম অতিথি, সমিতির সদস্য ও মেহমানরা মেতে উঠেন পিঠা উৎসবে। ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা,পাটিসাপটা, ডিম পিঠসহ প্রায় ২০ ধরনের পিঠার স্বাদ নেওয়ার পাশাপাশি চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ছবি তোলা আর গল্পগুজব। একবছর পর বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী, পরিচিত ও সহপাঠীদের পেয়ে দারুণ খুশি ঢাকাইয়া কেরানীগঞ্জবাসী।

উৎসব নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসিন মন্টু আমার সংবাদকে বলেন, পিঠাপুলি আর বাঙালি একে অপরের পরিপূরক, বিশেষ করে শীতের পিঠা। কিছুদিন আগেও শীত এলেই ঘরে ঘরে শুরু হতো পিঠা উৎসব, মা-দাদী আর খালা-নানীদের হাতে বানানো পিঠা খেতে করতে হতো প্রতিযোগিতা, অনেক সময় কম-বেশি পিঠা খাওয়া নিয়ে হতো মন মালিন্য, কিন্তু এসমব আজ কেবলই ইতিহাস। সে ইতিহাসকে মনে করিয়ে দিচ্ছে ঢাকাইয়া কেরানীগঞ্জ সমিতির আজকের এ আয়োজন। সময় উপযোগী এই আয়োজন করায় আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।
পিঠা উৎসবে আসা জিনজিরার সুইটি বেগম জনান, একবছর অপেক্ষা করি এই দিনটির জন্য। এটা শুধু পিঠা উৎসব না, ঢাকাইয়া কেরানীগঞ্জবাসীর মিলন মেলা। আমরা বারবার আসতে চাই এ উৎসবে।
মা-বাবার সাথে কলাতিয়া থেকে প্রথমবার উৎসবে এসেছেন ৪ বছরের আয়মান, এক সাথে এতো ধরনের পিঠা পেয়ে বেজায় খুশি সে। মায়ের কাছে জেনে নিচ্ছেন পিঠার নাম। কম খেলেও দেখেই খুশি আয়মান।
ঢাকাইয়া কেরানীগঞ্জ সমিতির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাহিদুল হক সাহিদ বলেন, বাঙালি সংস্কৃতিকে ধরে রাখা, আমাদের একে অপরের সাথে যোগাযোগ-মিলবন্ধন রক্ষার জন্যই এ উৎসবের আয়োজন। আমরা চাই পিঠা-পুলির সাথে নতুন প্রজন্ম পরিচিত হোক, পিঠার সাথে পরিচিতি নতুন প্রজম্মকে তার মা-খালা, দাদী-নানীদের কাছে টানবে। আমরা পর্যায়ক্রমে ইস্পাহানি কলেজ, হযরতপুর কলেজ, আমবাগিচা মহিলা কলেজেসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় এই শীতকালীন উৎসবের আয়োজন করব। আশাকরি কেরানীগঞ্জবাসী সব সময় পাশাপাশি থাকবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকাইয়া কেরানীগঞ্জ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো: জাকির হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেউদ্দিন ফারুক, সাইমন চৌধুরী, রিয়াজ আহমেদ, মোঃ শফিক সহ সমিতির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
কেএস