কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সরিষা চাষ কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। অল্প সময়ে, অল্প খরচে অধিক ফলন পাওয়ায় এই সরিষা আবাদ দিন দিন বাড়ছে। ফলে এ বছরও ভাল ফলনের আশা করছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। কৃষি আবাদ থেকে হারিয়ে যাওয়া সরিষা আবার ফিরে এসেছে নতুন প্রত্যাশা, নতুন সম্ভাবনা নিয়ে।
সরিষা ফুলের হলুদে বর্ণিল হয়ে গেছে ভৈরব উপজেলার মাঠ-প্রান্তর। মাঝে মাঝে দিগন্ত বিস্তৃত সরিষা মাঠের মধ্য দিয়ে উকিমারে রক্তিম সূর্য্য। মাঠভরা হলুদ ফুল দেখে ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখেন কৃষক।
কম খরচ ও পরিশ্রমে অধিক ফলন পাওয়া যায় সরিষা চাষে। পাশাপাশি ফসল বিক্রি করে ভালো দামও পাওয়া যায়। তাই সরিষা চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন ভৈরবের কৃষকরা। মাত্র ৮০ থেকে ৮৫ দিনে সরিষা ঘরে তুলতে পাড়ায় এখন একই জমিতে সরিষা পর আমন চাষ ও পরে পাট করছে কৃষকরা। ৩টি ফসল চাষ করতে পেড়ে বোনাস ফসল হিসেবে সরিষা চাষে বিপ্লব ঘটেছে কৃষকদের মাঝে। সরিষার চাষে উৎপাদন খরচ কম এবং ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকরা বেশ লাভবানও হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে সরিষার ফলন হয় ৬ থেকে ৭ মণ। তাই প্রতি বিঘা সরিষা চাষে সর্বোচ্চ চার থেকে পাচঁ হাজার টাকার বেশি খরচ হয় না। বিক্রি করা যায় কমপক্ষে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকায়। ফলে প্রতি বিঘা সরিষা আবাদে খরচ বাদে মোট লাভ দাঁড়ায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ফলে এখানে বারি -৯,বারি-১৪ ও বারি-১৫ সরিষার আবাদ প্রতিবছরই বাড়ছে।
কৃষক শামীম, মুজিবুর, আব্দুর রহমান, আবুল মিয়া ও বাদশা মিয়ারা জানান, তারা প্রতি বছর ৪০ থেকে ৪৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করে থাকেন। এই বছরও করেছেন ৪০ বিঘা জমিতে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সরিষার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিনামূল্যে বীজ-সারসহ নিয়মিত প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন আশা করছেন তারা।
কৃষকরা আরও জানান, সরিষার পাতা মাটিতে পড়ে জৈব সার তৈরি হয়। তাই এইসব জমিতে পরবর্তী ফসল ইরি-বোরে আবাদে নন-ইউরিয়া সার কম লাগে। এতে করে বোরো আবাদে তার খরচ অনেক কমে যায়। এ ছাড়া সরিষার শুকনো গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন তারা।
ভৈরব কৃষি বিভাগ জানায়, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী তিন বছরের মধ্যে ৪০ শতাংশ ভোজ্যতেল আমদানি কমিয়ে আনবে। সেলক্ষ্যে সারাদেশের মতো ভৈরবেও কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রণোদনা হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। আর মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পাশে থেকে সরিষার আবাদ বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এই বিভাগের কর্মীরা।
গত অর্থবছরে ভৈরবে সরিষার আবাদ হয়েছিলো যেখানে দুই হাজার দুইশ ৫০ হেক্টর, সেখানে চলতি বছরে আবাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার পাঁচশ ৫ হেক্টর। এই বৃদ্ধির ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখতে নানামূখি পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই বিভাগ।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাশেতা আকন্দ জানান, সরিষার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সাথে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। সরিষার বাজার দরও দুই বছর যাবত ভালো। ফলে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন সরিষা আবাদে। কৃষি বিভাগ থেকে সরিষা চাষে কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আবাহওয়া অনুকুলে থাকায় এবারও ভাল ফলনের প্রত্যাশা করছেন তিনি।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম আমার সংবাদকে জানান, এভাবে আবাদ বাড়তে থাকলে ভৈরবে সরিষা চাষে বিপ্লব ঘটে যাবে। তখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য এলাকায়ও বিক্রি করা যাবে এই ফসল। সরিষা একটি অন্তরবর্তীকালীন ফসল। আমন ধান ও বোরো ধান চাষের মধ্যবর্তী সময়ে চাষ করা হয় বিধায় এ সরিষা কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। ফলন বেশী ও বাজার মূল্য বেশী হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। এ জাতের সরিষা চাষে দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা অনেক খানি পূরণ হবে। এছাড়া ভোজ্যতেলে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের বীজ-সার প্রণোদনার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে তার বিভাগ।
কেএস