শীতে কাবু শিশুরা

শেবাচিমে একসপ্তাহে ৮ শিশুর মৃত্যু

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৩, ০৪:৫৪ পিএম
শেবাচিমে একসপ্তাহে ৮ শিশুর মৃত্যু
  • ডাক্তার ও নার্স হিমশিম খাচ্ছেন রোগীদের সামলাতে
  • একবেডে তিনজন রোগী
  • একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে ঘিরে ৫ জন ইন্টার্নি ডাক্তার
  • শিশু ওয়ার্ডের স্থায়ী বেড আছে মাত্র ৩৬টি
  • নিউমোনিয়া ও ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি

শীতের প্রকোপ যত বাড়ছে ততোই দক্ষিণাঞ্চলে বাড়ছে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। আর প্রকোপে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ঝরে গেছে গত একসপ্তাহে ৮ শিশুর প্রাণ। তারপরও এ্যাজমা, নিউমোনিয়া ও ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে স্বজনের উপচে পড়া ভিড় দক্ষিনাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শেবাচিম হাসপাতালে। ডাক্তার ও নার্স হিমশিম খাচ্ছেন রোগীদের সামলাতে। এই ঠান্ডায় কাউকে ফ্লোরিংএ দিতে পারছেন না, ফলে একবেডে দুজন এমনকি তিনজন করে রোগীর স্থান হয়েছে। ফলে একটি বেডকে ঘীরে তিনজন মাসহ স্বজনের ভিড়ে আরো বেশি অসুস্থ শিশুটি।

রোববার (৮ জানুয়ারি) সকালে শেবাচিমের শিশু ওয়ার্ডের ৩টি ইউনিট ঘুরে দেখা যায় ১৫ জন নার্সের ব্যস্ত ছোটাছুটি। একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে ঘিরে ৫ জন ইন্টার্নি ডাক্তার রোগী দেখতে ব্যস্ত।

শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ সুপ্তি জানালেন, শীতের সময় প্রতিবছরই আমাদের এই চাপ সামলাতে হয়। এক বেডে দু’জন করে শিশুরোগীকে রাখা হয়েছে। রবিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ১৬৭ জন এখন পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে বলে জানান তিনি। অথচ শিশু ওয়ার্ডের স্থায়ী বেড আছে মাত্র ৩৬টি। অতিরিক্ত বেড বসানোর পরও অনেক রোগীকে ফ্লোরে রাখতে হচ্ছে। গত সাতদিনে গড়ে একজন করে এখন পর্যন্ত ৮ শিশু মৃত্যু বরণ করছে বলে জানা গেছে। শিশু ওয়ার্ডের তথ্য মতে গত একসপ্তাহে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার শিশু শেবাচিমে চিকিৎসা নিয়েছে এবং এই মুহূর্তে মোট ভর্তির পরিসংখ্যান বহিঃবিভাগ ও আইসিইউ নিয়ে হাজারের কাছাকাছি হবে।

এখানে রোগী স্বজনদের অভিযোগ, একটি বেডে তিনজন করে শিশু, শিশুর স্বজন যদি থাকে কতটা ভিড় হয় একটু ভাবুন। ডাক্তার, নার্স আমাদের যতœ নিচ্ছে কিন্তু এই বেড সমস্যাই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। এত ভিড়েও কিন্তু থেমে নেই স্পেশাল বেডের বাণিজ্য। শিশু ওয়ার্ডে লিখিত বেডের সংখ্যা ৩৬টি অথচ এখানে এখন বেড রয়েছে ১০৭টি। দুটি গোপন ইউনিটে টাকার বিনিময়ে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে একজনের জন্য একটি বেড রয়েছে বলে জানান স্বজনরা।

তবে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম জানালেন, আমাদের চিকিৎসক সংকটের কারণে আমরা পৃথক শিশু ওয়ার্ড চালু করতে পারছি না। অল্পদিনের মধ্যে তৃতীয় তলায় সার্জারী বিভাগ সরিয়ে ওখানে ১০০ বেডের শয্যা হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডের ১ ও ২ ইউনিট ওখানে স্থানান্তর করা হবে। তাছাড়া নগরীর আমানতগঞ্জে সুকান্ত শিশু হাসপাতাল টি সম্পন্ন হলে শেবাচিমের চাপও কিছুটা কমবে।

তার বক্তব্যের সূত্র ধরে বরিশালের আমানতগঞ্জে নির্মাণাধীন ১০০ শয্যার সুকান্ত শিশু হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ভবনের কাজ শেষ হলেও ভিতরের স্যানিটারি ও বাহিরের বিভিন্ন কাজ এখনো বাকী। এটির ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত বলে জানা গেছে স্থানীয়দের কাছ থেকে। আর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভবন নির্মাণের কাজই আটকে আছে রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যাপ্ত বাজেটের অভাবে।

কেএস