বরিশালে অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি

বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৩, ০৫:০২ পিএম
বরিশালে অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি
  • ৩০৪ টির মধ্যে অর্ধেকের বেশি অবৈধ
  • হাইকোর্টের নির্দেশনা হচ্ছে না বাস্তবায়ন
  • নিস্ক্রিয় রয়েছে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তর  


বরিশালসহ দেশের সব জেলার অবৈধ ইটভাটা ও ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশনা জারি করেছিলো হাইকোর্ট। গত ১৩ নভেম্বর হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছিলো আগামী ৭ দিনের মধ্যে সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু নির্দেশনার প্রায় ২ মাস পার হলেও বরিশালে তা বাস্তবায়ন প্রায় শুন্যের কোঠায়। হাইকোর্টের নির্দেশনা পালনে নিস্ক্রিয় রয়েছে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তর। নির্দেশনার পর এখন পর্যন্ত বিভাগে মাত্র ৪ টিসহ বরিশাল জেলায় ২ টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করেছে। দীর্ঘ প্রায় দুই মাসের মধ্যে পরিবেশের সফলতা এতটুকুই। যেখানে শুধু বরিশাল জেলার ১০ উপজেলায়ই অবৈধ ইটভাটা রয়েছে ১৪৬ টি।

তবে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে আন্তরিক ও তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক মো. আবদুল হালিম। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অবৈধ ইটভাটার তালিকা প্রস্তুত করে বিভাগের সকল জেলা প্রশাসকদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের সাথে সমন্বয় করে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

তবে দীর্ঘ এই সময়ে মাত্র ৪টি ভাটা বন্ধ করার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা একটি সমন্বিত কার্যক্রম। শুধু পরিবেশ অধিদপ্তর চাইলেই অভিযান পরিচালনা বা বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে না। স্বাভাবিক কারনেই বিলম্ব হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সকল অবৈধ ভাটা বন্ধ করা হবে বলে জানান তিনি। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে অভিযোগ রয়েছে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে সরকার বা আদালত থেকে যখনই কোন নির্দেশনা আসে তা বাস্তবায়ন করতে নিস্ক্রিয় থাকেন বিভাগীয় পরিচালক আবদুল হালিম। প্রশাসনের সাথে সমন্বয়ের বিষয়ে তাকে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করার থাকলেও বিভিন্ন অযুহাতে থাকেন নিরব ভূমিকায়। যে কারণে প্রতিবারই অবৈধ ইটভাটা বন্ধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ বরিশালে নিষ্ফল থাকে। যে সুযোগ কাজে লাগিয়ে বরিশালে অবৈধ ইটভাটায় সয়লাব হয়ে গেছে। আর বছরের পর বছর ধরে নির্বিঘ্নে চলছে এসব অবৈধ ইটভাটা কার্যক্রম।

তথ্য বলছে, বরিশাল জেলায় মোট ইট ভাটার সংখ্যা ৩০৪টি। যার মধ্যে প্রায় অর্ধৈক ১৪৬টি অবৈধ। পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী শুধু মাত্র জিকজ্যাগ ইট ভাটা ছাড়া (পরিবেশের সনদ প্রাপ্ত) অন্য সকল ইট ভাটাই অবৈধ। তাতে যদি পরিবেশের সনদ থাকেও। কারণ ২০১৩ সালের পর ১২০ ফুট ও ড্রাম চিমনি ইট ভাটা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলায় ৩৫টি ১২০ ফুট এবং ৮০টি ড্রাম চিমনি ইট ভাটা রয়েছে। আইন অনুযায়ী এই ১১৫টি ভাটা ২০১৩ সাল অর্থ্যাৎ ৯ বছর আগে থেকেই অবৈধ হিসাবে গন্য হয়েছে। কিন্তু এই সময়েও তা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া জেলায় মোট ১৮৯টি জিকজ্যাক ইট ভাটা রয়েছে। তার মধ্যে ৩৫টির পরিবেশ সনদ নেই। জেলার মধ্যে বাকেরগঞ্জে সর্বোচ্চ ৪০টি এবং হিজলায় ৩১টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। অভিযান চলমান রয়েছে।

প্রসঙ্গত গত ১৩ নভেম্বর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ সারা দেশের দেশের অবৈধ ইট ভাটা বন্ধে এইচআরপিবি হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি শেষে আদালত ৪ সপ্তাহের রুল জারি করেন। বাংলাদেশের সব জেলার অবৈধ ইটভাটা বন্ধে ও জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার বন্ধে বিবাদীদের নিস্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং অবৈধ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন ও ভাটা কাঠ ব্যবহার বন্ধে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানাতে বলেন। আদালত এক অন্তবর্তীকালীন আদেশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব এবং পরিবেশ সচিবকে সব জেলার জেলা প্রশাসকদের কার্যকরী নির্দেশনা দিতে বলেন। ৭ দিনের মধ্যে যেন স্ব স্ব এলাকায় অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম ও জ্বালানি হিসেবে ইটভাটায় কাঠের ব্যবহার বন্ধ হয়। ২ সপ্তাহের মধ্যে আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আদালত অপর এক আদেশে পরিবেশের মহাপরিচালক, পরিচালক ও বিভাগীয় কমিশনারদের ১ সপ্তাহের মধ্যে তাদের নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় মনিটরিং টিম গঠন করে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম ও জ্বালানি হিসেবে ইটভাটায় কাঠের ব্যবহার স্থগিতকরণের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম এবং বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

কেএস