‘ফরমালিন-বিষমুক্ত খাদ্য সরবরাহ ও পরিদর্শনের জন্য পার্বত্য মেলার আয়োজন’

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৩, ০৩:০৯ পিএম
‘ফরমালিন-বিষমুক্ত খাদ্য সরবরাহ ও পরিদর্শনের জন্য পার্বত্য মেলার আয়োজন’

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেছেন, সারাদেশের মানুষের কাছে ফরমালিন ও বিষমুক্ত খাদ্য সরবরাহ এবং পরিদর্শনের জন্য প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ঢাকা রাজধানীতে পার্বত্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকার ফল ও খাদ্যদ্রব্য চোখ বন্ধ করে খেতে পারেন। কারণ পার্বত্য এলাকার মানুষ খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন বা বিষ মিশাতে জানে না। পার্বত্য এলাকার মানুষ সরল সোজা। পার্বত্য এলাকার মানুষ খাদ্যকে ভেজাল করতে শেখেনি। এটাই হলো পার্বত্য এলাকার মানুষের বৈশিষ্ট্য।

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চার দিনব্যাপী পার্বত্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

এ সময় তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চায় বরাবরই ছিল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। পার্বত্য মেলার মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের  সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য সামগ্রী, হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী কোমর তাঁতে বোনা পণ্য, বিভিন্ন মৌসুমী ফল, ঐতিহ্যবাহী পার্বত্য খাবার যা মেলার আকর্ষণকে অধিকতর বাড়িয়ে তুলেছে। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের  উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর প্রচার ও বিপণনের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এখানেতুলে ধরা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী  শেখ হাসিনার দৃঢ়তা ও সময়োচিত উদ্যোগের কারণেই ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি   সম্পাদন করা  সম্ভব হয়েছিল। ঐতিহাসিক এ চুক্তি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে পাহাড়ি অঞ্চলে দীর্ঘ দুই যুগের সংঘাতময় পরিস্থিতির অবসান ঘটে। এর পর থেকেই পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি অব্যাহতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যার ফলে পার্বত্য অঞ্চলে টেকসই উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে চার দিনব্যাপী পার্বত্য মেলা-২০২৩-এর শুভ উদ্বোধন করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি পার্বত্য মেলা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম মেলার উদ্বোধনী স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দীপংকর তালুকদার এমপি, মিজ বাসন্তী চাকমা এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী খালিদ এমপি বলেন, পার্বত্য মেলার মাধ্যমে পার্বত্য এলাকার মানুষের কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ইতিহাস ঐতিহ্যকে তুলে ধরে পার্বত্য অঞ্চলের জনগণ ও সমতল ভূমির জনগণের মধ্যে এক মেল বন্ধন রচিত হয়েছে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের দীর্ঘদিনের অশান্ত পরিবেশের অবসান হয়। যার ফলশ্রুতিতে সমতল অঞ্চলের শিক্ষিতের হারের চেয়ে বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষিতের হার অনেক বেশি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। এসব কিছুই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায় হয়েছে।

চারদিন ব্যাপী পার্বত্য মেলা প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলবে। পার্বত্য জেলার শিল্পীদের অংশগ্রহণে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। পার্বত্য মেলায় ১০৩টি স্টল বিভিন্ন পণ্য নিয়ে হাজির হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহ, প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদেরকে স্টলসমূহ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবন-কৃষ্টি-সংস্কৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ক তথ্যাদি সমতলের মানুষের মাঝে পরিচয় করিয়ে দেয়ার উদ্দেশে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর  উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর প্রচার ও বিপণনের মাধ্যমে প্রতি বছরের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আজ থেকে চার দিনব্যাপী পার্বত্য মেলা শুরু হলো। এ মেলার মধ্য দিয়ে পার্বত্য জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে।
মেলার স্টলে চার দিনব্যাপী তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য সামগ্রী, হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী কোমর তাঁতে বোনা পণ্য, ঐতিহ্যবাহী পার্বত্য খাবার দ্রব্য প্রদর্শন ও বিক্রয় অব্যাহত থাকবে।

এবি