প্রতিবন্ধি বৃদ্ধা কমলার ভাগ্যে জোটেনি উপহারের ঘর

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩, ০৭:২৪ পিএম
প্রতিবন্ধি বৃদ্ধা কমলার ভাগ্যে জোটেনি উপহারের ঘর

নাটোরে বসবাসযোগ্য ঘরের জন্য আবেদন করেও ষাটোর্ধ্ব বয়সী প্রতিবন্ধি বৃদ্ধা কমলা বেগমের ভাগ্যে জোটেনি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। স্বামীহারা ওই বৃদ্ধা তার পৈত্রিক ভিটার এক চিলতে জমিতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া নড়বড়ে টিনের ছাউনি ঘরে একাকী জীবন কাটাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেলে শেষ জীবনে ভাল পরিবেশে শান্তিময় জীবন কাটাতে চান প্রতিবন্ধি বৃদ্ধা কমলা বেগম।

নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী সিংড়া উপজেলার লালোর ইউনিয়নের লালোর গ্রামের ৬৬ বছর বয়সী প্রতিবন্ধি কমলা বেগম জন্ম থেকেই একটি হাত ও একটি পা বিকলাঙ্গ। স্বামী-সন্তান কেউ নেই। পৈত্রিক সম্পত্তির এক চিলতে জমিতে প্রয়াত স্বামীর হাতে তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া টিনের ছাউনি ঘরে একাকী জীবন কাটাচ্ছেন। ওই ঘরও এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঘরের দরজাও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। বহু পুরানো একটি চৌকিতে ঘুমানো সহ খাওয়া দাওয়া সবকিছুই করতে হয়। চৌকিতে পাটি বিছানো ছাড়া কিছুই নেই। চিলতে দাগ পড়া একটি লেপ দিয়ে শীত মৌসুমের রাত কাটে কমেলার। প্রতিবেশীদের আক্ষেপ যাদের মথা গোঁজার ঠাঁই রয়েছে তারাই ঘর পাচ্ছেন। অথচ প্রতিবন্ধি কমলার ভাগ্যে জুটছে না উপহারের ঘর। প্রতিবন্ধি কমলা বেগমকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার একটি ঘর দেওয়ার দাবি করেছেন প্রতিবেশীরা।

প্রতিবন্ধি বৃদ্ধা মোছাঃ কমলা বেগম বলেন, কয়েকবার ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর চেয়েও কিছুই মেলেনি। ভিক্ষাবৃত্তি করেই চলে তার সংসার। উপজেলা সমাজ সেবা থেকে তাকে একটি প্রতিবন্ধি কার্ড দেওয়া হয়েছে। টিউবওয়েল নাই, তাই বোতলে করে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে খাওয়ার পানি আনতে হয়। ওই পানি কয়েকদিন ধরে খাই। খোলা মেলা জায়গায় টয়লেটে লজ্জা সরম নিয়েই প্রকৃতির কাজ সারতে হয়। কেরোসিন কিনতে না পারায় কুপি বাতি জ্বালাতে পারেননা রাতে। অন্ধকারেই রাত কাটে তার। মরার আগে প্রধানমন্ত্রী যদি তাকে একটি ঘর দিতো তাহলে ওই ঘরে আরাম আয়েশে ঘুমাতে পারবেন। বসবাসযোগ্য একটি ঘর হলে সব কষ্ট তিনি ভুলে যেতেন এবং মৃত্যুর সময় তিনি শান্তি পেতেন।  

কমলার এই আকুতি শুনে প্রতিবেশীদের কেউ কেউ সরকারের নিয়মের মধ্যে কমলার জন্য একটি ঘর বরাদ্দের আবেদনও করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে। কিন্তু সেই আবেদনেও সাড়া মেলেনি।

বৃদ্ধা কমলার সম্পর্কে আত্মীয় পাশের হাতিয়নদহ  গ্রামের বাসিন্দা রুস্তম আলী জানান, বৃদ্ধার জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে একটি ঘরের জন্য আবেদন করা হয় কয়েকবার। যেহেতু ঘর বরাদ্দের জন্য ক- বিভাগ বা খ- বিভাগে সরকারের নিয়মের মধ্যে ঘর ছিল। ভুমি মন্ত্রণালয়ের ভুমি সহ যাদের ঘর দেয়া হচ্ছে সেখানেও আবেদন অকরা হয়। এছাড়া নিজের জায়গায় ঘর করে দেওয়ারও আবেদন করা হয়। যেহেতু ওই বৃদ্ধা তার পৈতিক কিছু জমি পাবেন সেই জমিতে একটি ঘর করে দেওয়ার জন্যও মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে বলা হয়। যেহেতু তার কেউ নেই এবং বৃদ্ধ,সেকারনেই তার পৈত্রিক ভিটায় প্রাপ্ত জমির ওপর একটি ঘর করে দেওয়ার প্রধানমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন জানান। তার কেউ নেই এবং প্রতিবন্ধি মানুষ হওয়ায় তার প্রতি সহায় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

প্রতিবেশী মাজেদা বেগম ও মোঃ সুমন আলী বলেন, ওই বৃদ্ধ একজন লুলা মানুষ। তার একটি হাত ও একটি পা অকেজো। তার চলা ফেরা করতেই কষ্ট হয়। তাকে একটা ঘর না দিয়ে যাদের সম্পদ আছে,ঘর আছে তারাই প্রধানমন্ত্রী বরাদ্দ উপহারের ঘর পাচ্ছে। তার কেউ নাই এজন্য সে সরকারি অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন। কমলার মত যারা প্রাপ্য তারাই পায় না।

সামাদ আলী ও ইসমাইল হোসেন বলেন,প্রতিবন্ধি এই বৃদ্ধার দিকে কারো নজর পড়ে না। তার প্রয়াত স্বামীর করা ঘরটিও এখন নড়বড়ে। যে কোন সময় ঘর পড়ে ঘরের নিচে চাপা পড়ে বৃদ্ধার মৃত্যুর আশংকা রয়েছে। তাকে একটি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দিলে খুব উপকার হবে।

কমলা বেগমের কোন আবেদন তিনি হাতে পাননি। তবে নিয়মের মধ্যে কমলা বেগম ঘর পাওয়ার যোগ্য হলে ইউএনওর সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান, লালোর ইউপি চেয়ারম্যারম্যান একরামুল হক শুভ।

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, প্রতিবন্ধি কমলা বেগম যাতে ভাল পরিবেশে বসবাস করতে পারেন সেবিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি নিজে এলাকায় গিয়ে কমলা বেগম সহ এলাকার মানুষদের সাথে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন। এখন জেলা প্রশাসনের বরাদ্ধ থেকে শীত বস্ত্রসহ তার চলার মত যতটুকু সম্ভব তা সরবরাহ করা হবে।

কেএস