বরিশালের সৌন্দর্যের প্রধান আকর্ষণ কীর্তনখোলা নদী ও নদী তীরবর্তী পাঁচ কিলোমিটার এলাকা। অথচ নদীর তীরের পুরোটাই ক্রমশ দখল করে নিচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল। তীরের অবৈধ স্থাপনার কারণে হুমকিতে পড়েছে শহর রক্ষা বাঁধ।
কীর্তনখোলা নদীর লঞ্চঘাট থেকে দক্ষিণে কেডিসি হয়ে ত্রিশ গোডাউন পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারের বেশি এলাকা এখন অবৈধ স্থাপনা, দোকান-পাটসহ মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
এখানে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার বস্তিঘরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার রাজত্ব চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে অভিযোগের আঙ্গুল নৌ পুলিশ ও মেরিন বিভাগের কর্মকর্তাদের দিকেও।
সরেজমিনে নগরীর ডিসিঘাট থেকে মুক্তিযোদ্ধা পার্ক হয়ে কেডিসি বের হতে গিয়েই ভ্রমণে আসা দুইজন অতিথির কটাক্ষ শুনতে হলো শহর রক্ষা বাঁধের উপর অনেকগুলো ছাগলের খোঁয়াড় নিয়ে।
এখানে বাঁধে ভাঙন ধরেছ। একটু এগিয়ে চোখে পড়ে নদীরক্ষা বাঁধের ওপরের পায়ে হাঁটা পথে এখন গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও হাস মুরগি-ছাগলের ঘর।
নদীর মধ্যে খুঁটি গেড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন দোকান, রান্নাঘর, এমনকি গোয়ালঘরসহ আরো অনেক কিছু। শুধু তাই নয় নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, মেরিন বিভাগের কয়েকটি জেটি ছাড়াও রিভার ফায়ার স্টেশনও তৈরি হয়েছে নদী দখল করেই। আর এ সুযোগ নিয়েই জেটির পিলার বরাবর নদীদখল করে নিচ্ছে একটি মহল। এসব কারণে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে বাঁধের কয়েকটি স্থানে।
প্রশাসনের নৌবহর বা জেটি বিষয়টি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এটিকে এড়িয়ে গিয়ে দোকানপাট ও পায়ে চলা পথ আটকে দেয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে স্থানীয় বাসিন্দারা তেড়ে এসে বলেন, যা বলার স্থানীয় কাউন্সিলরকে বলুন। এ পাশটা ১০ নং ওয়ার্ড আর মুক্তিযোদ্ধা পার্কের উত্তর পাশটা আওয়ামী লীগ নেতার নিয়ন্ত্রণে। সব মিলিয়ে কীর্তনখোলা নদী তীরবর্তী এই এলাকায় উত্তরাংশে দোকানপাটসহ প্রায় তিন হাজার ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় ওই আ. লীগ নেতা।
১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহীদুল্লাহ কবির জানান, অবৈধ ঘরবাড়ি দোকানপাট দেখে আমিও বিরক্ত। জনপ্রতিনিধি হবার কারণে আমিতো উচ্ছেদ করতে পারি না। তাই নিজেই কয়েকবার বিআইডব্লিউটি এর কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেছি।
অপরদিকে আ. লীগ নেতাকে পাওয়া না গেলেও স্পীডবোট ঘাটে তার অনুসারীদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নদী তীরবর্তী এই এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিআইডব্লিউটি এর। নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, মেরিনবিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে এই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।
যে কারণে র্যাব ও পুলিশের হাতে এখানে মাদকসহ বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়লেও নৌ পুলিশের ভূমিকা নিরব। বিআইডব্লিউটি এর উচ্ছেদ অভিযান সবসময় লঞ্চঘাট থেকে এই স্পীডবোট বা ডিসিঘাট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এদিকে সিটি করপোরেশন ও বিআইডব্লিউটি এর আওতায় বলে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
তবে বিআইডবিআইডব্লিউটি এর নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি আসার পর থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়নি। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে আমাদের উচ্ছেদ অভিযান খুব শীঘ্রই পুনরায় শুরু হবে। তার আগে সবাইকে নোটিশ দেয়ার কাজ চলছে।
এআরএস