বিস্তীর্ণ এলাকা ফসলের মাঠ, চারিদিকে হলুদের সমারোহ। একসময় লাভ না হওয়া ও অব্যাহত লোকসান গুনতে থাকায় ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় সরিষা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন চাষিরা। তবে এখন কৃষি বিভাগের উদ্যোগে এখানকার কৃষকরা আবারও সরিষা চাষে মনোযোগী হয়েছেন।
এতে গত বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলাটিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ বেড়েছে সরিষার। উচ্চফলন আর লাভের আশায় কৃষকদের মনে এখন আনন্দের জোয়ার। বিনা মূল্যে পাওয়া উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা ফলনে কৃষকের মুখে প্রশান্তির হাসি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত মৌসুমে সরিষার অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চলতি মৌসুমে উপজেলায় এবার ৬ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে ১০৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ বেশি হয়েছে। আশা করা যায় ৯৮০০ মেট্রিক টন সরিষা কৃষক ঘরে তুলবে।
উপজেলার , লেহেম্বা, হোসেনগাঁও, রাতোর, নন্দুয়ার, ধর্মগড়, বাচোর,নেকমরদ ও কাশিপুর ইউনিয়নে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় যে, বিস্তীর্ণ মাঠে এখন সরিষার হলুদ রঙের ফুলের সমারোহ। যেন হলুদ রঙের সুষমা শোভা পাচ্ছে দিকে দিকে। গুনগুন শব্দে মধুলোভী মৌমাছিরা এখন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে বসে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের কৃষক মনতাজ আলী জানান, সরিষা চাষে তেমন খরচ নেই। শুধু জমি চাষের পর বীজ ছিটিয়ে দিতে হয়। তারপর গাছ বড় হলে দিতে হয় সেচ। সার বা কীটনাশক তেমন একটা দিতে হয় না। এ কারণে সরিষা চাষে অনেক লাভ। এ ছাড়া এলাকার অনেক চাষি উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা বীজ বিনামূল্যে পেয়েছেন।
বাচোর ইউনিয়নের কৃষক শাহজামাল জানান, সরিষা চাষে খরচ কম লাভ বেশি।বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেশি। তাই তিনি এবার ২ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। প্রতিটি ইউনিয়নের কৃষকদের আশা এবারে সরিষার বাম্পার ফলন হবে । আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর সরিষার ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার (কৃষিবিদ) সন্জয় দেবনাথ জানান, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তাই কৃষকরা উৎসাহিত হয়ে সরিষার ব্যাপক চাষাবাদ করেছেন। শুধু তো ধান চাষ করলে হবে না। পাশাপাশি ভুট্টা, সরিষা, আলু, সূর্যমুখী ফুল, পাট, তিলসহ অন্যান্য ফসল চাষের প্রতিও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকালে এ বছর সরিষার ভালো আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে।
আরএস