বাল্য বিয়ের কুফল

বরিশালে বেড়েছে সদ্যজাত শিশু মৃত্যুর হার

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো: প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৩, ০৪:২৮ পিএম
বরিশালে বেড়েছে সদ্যজাত শিশু মৃত্যুর হার

বরিশালে ক্রমেই বেড়ে চলেছে সদ্যজাত শিশু মৃত্যুর হার। আগাম জন্ম, কম ওজন নিয়ে জন্ম, শ্বাসকস্ট আর খিচুনির কারণেই এসব শিশু মারা যাচ্ছে। বাল্যবিয়ের কুফলে মায়ের অপুষ্টির কারনে এসব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এসব নিয়ন্ত্রনে পারিবারিক অসচেতনতাকেও দায়ী করা হচ্ছে।

বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের বিশেষায়িত নবজাতক সেবা কেন্দ্রের সামনে মায়েদের প্রচন্ড ভীড় দেখা যাওয়া এখন সার্বক্ষণিক বিষয়ে পরিনত হয়েছে। এখানে ঝুঁকিপূর্ণ সদ্যজাত শিশুদের প্রান বাঁচানোর শেষ চেস্টা চলে। মারাত্মক কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের এখানে দেয়া হয় চিকিৎসা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৪৬ বেডের ওই ওয়ার্ডে শনিবার শিশু ছিলো ১২২ জন। অধিকাংশ শিশুর জন্মই হয়েছে আগাম। এ নিয়ে অনেকটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে রয়েছেন মায়েরাও। নবজাতকদের ওজন ও রক্তচাপ এতোটাই কম থাকছে যে তাদের ধরে রাখা যাচ্ছেনা। কিছু শিশুর ওজন পাওয়া যাচ্ছে চার থেকে পাঁচশ’ গ্রাম।

সূত্রে আরও জানা গেছে, গত একবছরে এই কেন্দ্রে অপুষ্টির শিকার প্রায় নয় হাজার শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে মারা গেছে ১৪শ’ ১৫ জন শিশু। পূর্ববর্তী বছরে এমন শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো ৯৮৬ জন। শেবাচিম হাসপাতালের বিশেষায়িত নবজাতক সেবা কেন্দ্রের সিনিয়র নার্স জোবায়দা বিবি বলেন, গ্রামেগঞ্জে জন্মগ্রহণ করা সদ্যজাত শিশুদের যে প্রক্রিয়ায় হাসপাতালে আনা হচ্ছে তা মানহীন। এদের বেশির ভাগই শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। হাসপাতালে আনাও হচ্ছে শোচনীয় অবস্থায়। তাই অধিকাংশ শিশু ভর্তির পরক্ষণে চিকিৎসা দেওয়ার আগেই মারা যাচ্ছে।

হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯০ দিনে এখানে সর্বোচ্চ ৪১৩ জন সদ্যজাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৩৯৯ জন, এপ্রিল মাস থেকে জুন পর্যন্ত ২৯৮ জন এবং জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ৩০৫ জন সদ্যজাত শিশু মৃত্যুবরণ করেছে।

কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. বিধান চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সদ্যজাত শিশু মৃত্যুর জন্য গর্ভজাতকালীন মায়ের অযত্নও রয়েছে। তাই গৃহস্থে সন্তান জন্মের অপেক্ষা না করে সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য সময়ে প্রসূতিকে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

হাসপাতালের নবজাতক সেবা কেন্দ্রে সদ্যজাত শিশু মৃত্যু বৃদ্ধির হারকে স্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, আগাম সন্তান জন্মের হার কমানো গেলে কম ওজনের শিশু সংখ্যা কমানো যাবে, ঠেকানো যাবে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা। এজন্য প্রথমে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। চিরতরে বন্ধ করতে হবে বাল্যবিয়ে নামক অভিশাপ। কারণ বাল্যবিয়ের কুফলে মায়ের অপুষ্টির কারনেই অধিকাংশ সদ্যজাত শিশু ওজনে কম হয়।

আরএস