বরিশালের গৌরনদীতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বাঈজিদ সরদার (১৩) নামে এক কিশোরকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত যুবক তার পরিবারসহ গা ঢাকা দিয়েছে।
নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী জানায়, গৌরনদী উপজেলা সদরের গোবর্দ্ধন গ্রামের মুজাম সরদারের কিশোর পুত্র বাঈজিদ সরদারকে (১৩) গত সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয় প্রতিবেশী মাছের খামারি আব্দুল বেপারী (২৪)।
এরপর তারা দু’জন মিলে ৫০ কেজি সারের একটি বস্তা আব্দুলের রিকসা ভ্যানে তুলে পার্শ্ববর্তি বালিয়ার পাড় এলাকার ফকির বাড়ি সংলগ্ন পূর্ব পাশের একটি বোরো ক্ষেতে প্রয়োগের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়।
এর প্রায় ৩০ মিনিট পর সকাল ১০টার দিকে আব্দুল বেপারী বাঈজিদকে অসুস্থ্য ও অচেতন অবস্থায় কাঁধে নিয়ে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। তখন বাঈজিদের সারা শরীর ভেজা ও কর্দমাক্ত ছিল।
এরপর স্বজনরা দ্রুত তাকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ তাৎক্ষনিক তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
সেখানে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে মঙ্গলবার রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্বজনরা তাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছাকাছি গেলে ওইদিন রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে বাঈজিদ মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়ে।
এ ঘটনায় বুধবার সকালে রাজধানী ঢাকার শাহবাগ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজুর পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পোষ্টমর্টেম শেষে বুধবার রাতে স্বজনরা তার লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এ সময় স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে এ ঘটনা চারিদিকে জানাজানি হয়।
বাঈজিদের চাচা মো. মনিরুজ্জামান সরদার জানান, বাঈজিদের এ অবস্থা কি ভাবে হলো আমরা তা আব্দুল বেপারীর কাছে একাধিক বার জানতে চেয়েছি। সে এক এক সময় এক এক কথা বলছে। কখোনো বলছে সে একটি ডোবার পানিতে পড়ে গেছে। তাই তার শ্বাস নালিতে পানি ঢুকেছে। আবার বলছে তাকে ভুতে ধরে পানিতে চুবিয়েছে। বাঈজিদের মৃত্যুর খবর জানতে পেরে আব্দুল বেপারী তার পরিবারসহ গা-ঢাকা দিয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, আমি মাছের খামারের ব্যবসা করি। আব্দুল বেপারীর বাবা বাবুল বেপারীও মাছের খামারের ব্যবসা করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। বাঈজিদ সব সময় আমার সঙ্গে থেকে আমার মাছের খামারের পরিচর্যার কাজে সহযোগীতা করত। এর জের ধরে আব্দুল বাঈজিদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার চেষ্টা করতে পারে।
ঘটনার পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বাঈজিদ অচেতন থাকায় তার কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে চিকিৎসক বা স্বজনরা কিছুই জানতে পারেন নি।
তার ধারনা আব্দুল বেপারীকে আটক করে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আফজাল হোসেন বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৫টায় বলেন, এ ঘটনা সম্পর্কে নিহতের পরিবার থেকে এখনও কেউ থানাকে কিছু জানায় নি। তবে যেহেতু পোষ্টমর্টেম হয়েছে, সেহেতু পোর্ষ্ট মর্টেমে কোনো কিছু প্রকাশ পেলে থানায় মামলা নেয়া হবে।
এআরএস