গবেষণার জ্ঞানকে জনগণের দ্বারগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে: শিক্ষা মন্ত্রী

যবিপ্রবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩, ০৭:০৬ পিএম
গবেষণার জ্ঞানকে জনগণের দ্বারগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে: শিক্ষা মন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষাকে উপযুক্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করতে হলে গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। গবেষণালব্ধ জ্ঞানের ফসলকে জনগণের দ্বারগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রয়োজন হয় উদ্যোক্তা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবগুলো বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে ধীরে ধীরে যুক্ত হচ্ছে। এটা সত্যিই খুশির খবর।

শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ‘৪র্থ সমাবর্তন-২০২৩’ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসব কথা বলেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে তিনি এ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর প্রথমে তিনি যবিপ্রবির প্রধান ফটকস্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে সমাবর্তনের শোভাযাত্রা সহকারে তাঁরা অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন। এবারের সমাবর্তনে যবিপ্রবির স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে এক হাজার ৮৩৪ জন গ্রাজুয়েট অংশগ্রহণ করে। তাঁদের মধ্যে ২২ জন গ্রাজুয়েট চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক, ২৬ জন ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড এবং ৫৬ জন ডিন্স অ্যাওয়ার্ড পান।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের মূল উপাদানগুলো হবে- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার। এছাড়া ২০৩১ সালের মধ্যে আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করব। আমাদের ডেমোগ্রাফিক যে ডিভিডেন্ট রয়েছে, সেটি আর ৯/১০ বছরের রয়েছে। আমাদের সামনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের তৈরি হতে হবে। আর এটি মোকাবিলার মূল হাতিয়ার হচ্ছে শিক্ষা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বর্তমান শিক্ষাক্রম সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নেই তৈরি হয়েছে।

ডা. দীপু মনি বলেন, উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নে আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করেছি, তারা কাজও শুরু করেছে। শিক্ষা ও গবেষণাকে খাতকে প্রাধান্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার নতুন নতুন প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষাকে সহজলভ্য করার জন্য সকল জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সে কারণে আমাদের যে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রয়েছে, তারা যেন তাদের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি না করেন। কারণ ধারণ ক্ষমতার বাইরে নানা সমস্যা তৈরি হয়, অসন্তোষ তৈরি হয়।

গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আপানদের যাত্রাপথকে অসততা দিয়ে কলুষিত করবেন না। এটি খেয়াল রাখতে হবে। সত্যের পথ একটু কঠিনই হয়। তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম সে কখনো করে না বঞ্চনা।’

সমাবর্তন বক্তৃতায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমীর সম্পাদক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হাসিনা খান গ্রাজুয়েটদের উদ্দশ্যে বলেন, জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখা তোমার মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। জীবনে শুধু একটি দিকের বৃদ্ধি অন্য দিকগুলোর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, কর্মসংস্থান, ব্যক্তিগত জীবন এবং পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য। তিনি বলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বয়সে নবীন হলেও শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের তারুণ্যদীপ্ত শিক্ষকমন্ডলী গবেষণা ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে।  

স্বাগত বক্তব্যে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমাদের এ অর্জনে তোমাদের পিতা-মাতা, শিক্ষকমন্ডলীসহ সমগ্র জাতি গর্বিত। সীমাহীন পরিশ্রম ও কর্তব্য নিষ্ঠা তোমাদের এ সাফল্য এনে দিয়েছে। স্মরণ রাখবে, তোমাদের এ অর্জনের নেপথ্যে ছিল এ দেশের সরকার, তোমাদের পরিবার, শিক্ষকমন্ডলী এবং সর্বোপরি এ দেশের জন-সাধারণ, যাদের অর্থে পরিচালিত হয় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। তোমরা তাদের কাছে চির ঋণী। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমেই কেবল এ ঋণ পরিশোধ সম্ভব। দেশ-বিদেশে তোমরাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করবে। তোমাদের কাজের উপরই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও মর্যাদা নির্ভর করবে।’

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খাঁন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিহিররঞ্জন হালদার, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরহাদ হোসেন, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান  ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. কামরুজ্জামান, পাবনা বিজ্ঞান  ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু নঈম শেখ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, যবিপ্রবি রিজেন্ট বোর্ডের সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক ড. গোলাম শাহী আলম, অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবীর, অধ্যাপক ড. মোঃ আহসান হাবীব, যশোর-খুলনা অঞ্চলের উচ্চ পদস্ত সরকারি কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষসহ বিপুল সংখ্যক বরণ্যে ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গ্রাজুয়েটগণ ছাড়াও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, চেয়ারম্যান, শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোঃ নাসিম রেজা ও ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আহসান হাবীব।

আরএস