কাপ্তাই হ্রদের জলেভাসা জমিতে বোরো আবাদ শুরু

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩, ০২:৫৬ পিএম
কাপ্তাই হ্রদের জলেভাসা জমিতে বোরো আবাদ শুরু

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের জলেভাসা জমিতে শুরু হয়েছে বোরো ধানের আবাদ। শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে কাপ্তাই হ্রদের বুকে ও পাহাড়ি ঘোনায় ভেসে উঠা চরে ধানের চারা রোপনে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে চাষিরা। এদিকে নির্ধারিত সময়ের আগে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে গেলে ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে চাষিদের।

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলাশয় কাপ্তাই হ্রদ ঘেরা পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি। প্রতি বছর শীত মৌসুমে এ হ্রদের পানি আস্তে আস্তে কমতে থাকলে হ্রদের বুক চিড়ে পাহাড়ি ঘোনায় ভেসে উঠে জলে ভাসা চাষাবাদ যোগ্য জমি। নভেম্বর মাসের শেষে দিকে থেকে জলেভাসা জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়ে চলে এপ্রিল পর্যন্ত। পলি ভরাট এসব জমিতে লাঙ্গল চাষ ছাড়াই ধান রোপন করে চাষিরা। কিন্তু এপ্রিলে বর্ষা মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে গেলে তলিয়ে যায় আবাদি ফসলের মাঠ। তাই অনেকটা ভাগ্যের উপর নির্ভর হয়ে চাষাবাদ করে জলেভাসা জমির চাষিরা। আর জলেভাসা জমিতে উৎপাদিত ফসলই কৃষকদের পুরোবছরের খাদ্যের যোগান দিয়ে থাকে।

রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমির পরিমাণ নির্ভর করে হ্রদের পানি উঠানামার উপর। তবে রাঙ্গামাটি জেলায় এ বছর সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার হেক্টর জলেভাসা জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। আর তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পানি কমে গেলে কৃষকরা চাষ করে থাকে। এ পর্যন্ত ১৮০০ হেক্টর জলেভাসা জমিতে ধান রোপণ করা হয়েছে। এব্যাপারে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, যথা সময়ে  হ্রদের পানি শুকানো শুরু হয়েছে। আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের জলেভাসা জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হবে।

জেলা শহরের রাঙ্গাপানি এলাকার স্থানীয় কৃষক মো. শাহাবুদ্দীন বলেন, আমি এবং আমার বড় বোন মিলে তিন একর জলেভাসা জমিতে ৫০কেজি উচ্চফলনশীল জাত ২৮ এবং বঙ্গবন্ধু বোরো ধান রোপন করেছি। আশা করছি ৮০মণের উপর ধান পাবো।

এ কৃষক আরও বলেন, ধানের মণ বর্তমানে এক হাজার চারশত টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার পাঁচশত টাকা পর্যন্ত বিক্রি চলছে। মওসুমের আগে হ্রদের পানি না বাড়লে আমরা ফসল যেমন যথা সময়ে ঘরে তুলতে পারবো তেমনি লাভের অংকটা ভারী হবে।

একই এলাকার কৃষাণী শান্তি দেবী চাকমা বলেন, আমি দুই একর জলেভাসা জমিতে ধান রোপ করেছি। ফসল যদি সঠিক সময়ে ঘরে তুলতে পারি তাহলে পুরো বছর আমার সংসার চলে যাবে।

ধান লাগানোর কাজে জড়িত শ্রমিক মায়ারাণী চাকমা এবং সুমন চাকমা বলেন, সারা বছর কৃষি কাজ করে জীবন পার করি। প্রতিদিন ৬০০টাকা বেতনে কাজ করি। এ কাজ করতে অনেক ভাল লাগে।

রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, বোরোর মওসুম শুরু হয়েছে। এবছর উল্লেখযোগ্য হ্রদে পানি ছিলো না। শীতের শেষে হ্রদে পানি কমতে থাকায় চাষিরা ধান রোপনে ব্যস্ত  সময় পার করছে।

এ কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, অনেকবার চার হাজার জলেভাসা জমিতে আবাদ করতে পারলেও এইবারও আমরা আশা রাখছি সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি জমিতে তরমুজ, শসা, সবজিসহ নানারকম ফলমূলের চাষাবাদ করা হবে।

কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার পাল বলেন, সরকার কৃষির উন্নয়নে সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রেখেছেন। সরকার কৃষির উন্নয়নে বছর কোটি কোটি টাকা ভুর্তুকী দিয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারের নির্দেশনা মেনে কৃষকদের সার, বীজ, কীটনাশক দিয়ে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মাঠ কর্মীরা যেখানে চাষবাদ সেখানে অবস্থান নিয়ে কৃষকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

জলেভাসা জমিতে বোরো ধানের পাশাপাশি নানারকম ফল, শাক সবজির চাষাবাদ করা হয়। এ জমিতে উৎপাদিত ফসল একদিকে যেমন কৃষকদের অর্থনৈতিক চাকা সচল করে তেমনি জেলার মানুষের খাদ্য জোগান দিয়ে থাকে।

কেএস