ফরিদপুর জেলা পেঁয়াজ চাষের জন্য বিখ্যাত। আর কিছুদিন পরেই পুরোদমে শুরু হবে পেঁয়াজ তোলা। জেলায় এবারও পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। গতবারের লোকসান পুষিয়ে এবার লাভের আশা যেন গুড়ে বালি। মৌসুম শুরুর আগেই পেঁয়াজের দাম অনেক কম। এ অবস্থা বজায় থাকলে এতে লাভ তো দুরে থাক খরচও উঠবে না। কৃষকদের কপালে তাই চিন্তার ভাঁজ। হতাশার পাল্লাও ভারী হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে বেশি পিয়াজের আবাদ হয় নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায়। এ দুটি উপজেলাকে পেঁয়াজের রাজধানী বলা হয়। তবে গত বছর থেকে পেঁয়াজ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকেরা। গত বছর পেঁয়াজ আবাদ করে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় মোটেই লাভবান হতে পারেননি তারা। তাই গতবারের মতো এবারও শুরুতেই পেঁয়াজের দাম কম থাকায় চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। গত বছরের লোকসান সামাল দিয়ে এ বছর পিয়াজ বিক্রি করে ঘুরে দাঁড়ানোর যে আশা করেছিলেন তাতে অনেকটাই যেন গুড়ে বালি। তারপরও কতটুকু সফল হবে এ নিয়ে দোলাচালে রয়েছেন তারা।
ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের মধ্যে ফরিদপুর জেলা পেঁয়াজ চাষে বিখ্যাত। বিশেষ করে সালথা উপজেলার কৃষকদের প্রধান অর্থকরী ফসল এই পেঁয়াজ। প্রতিটি মৌসুমের উৎপাদিত পেঁয়াজই অত্র অঞ্চলের সাধারণ কৃষকদের সারা বছরের জীবিকার জোগান দিয়ে থাকে। তবে দাম কমের কারণে প্রতিবছরই কমছে পেঁয়াজের আবাদ। গত ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে জেলায় মোট ৪০ হাজার ৭৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। গত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে মোট ৪০ হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়। আর চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে ৩৫ হাজার ৮৭৬ হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে। গড়ে প্রতিবছরই কিন্তু পেঁয়াজের আবাদ কমছেই। গতবছরের মতো এবং এবারও শুরুতে যে দাম দেখা যাচ্ছে তাতে আগামীতে পেঁয়াজের আবাদ আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সালথা উপজেলার পেঁয়াজ চাষি হারাধন মন্ডল বলেন, গত বছর প্রায় ৬ একর জমিতে হালি পেঁয়াজের চাষে সব মিলিয়ে প্রতি একর জমিতে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো হলেও দাম ভালো না পাওয়ায় বেশ লোকসানে পড়তে হয়। এবারও লাভের আশায় প্রায় ৫ একরের বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। তাতে গতবারের মতো এবারও লোকসান গুনতে হবে। গত মৌসুমে প্রতিমণ কাঁচা পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৭০০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকা দরে। সারাবছরের জন্য কিছু পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রির আশায় ঘরে মজুদ করে রেখেছিলাম। তা শুকিয়ে অনেক ঘাটতি হয়। বছরের শেষে সেই শুখনো পেঁয়াজ প্রতিমণ বিক্রি করেছি ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ সাড়ে ১৫০০ টাকা দরে। সবশেষে হিসাব করে দেখাযায়, লাভ দুরে থাক উৎপাদন খরচও ওঠেনি।
বোয়ালমারী উপজেলার টোংরাইল গ্রামের পেঁয়াজ চাষি জয়দেব বিশ্বাস বলেন, এ বছরও খেত বেশ ভালো হয়েছে। শুরুতেই কম দাম চলছে। বর্তমানে মণ প্রতি পেঁয়াজের দাম হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। এভাবে চলমান থাকলে লাভ তো হবেই না। উৎপাদন খরচ নিয়ে চিন্তায় আছি। চাষিদের পথে বসতে হবে। সকল খরচ বাদে প্রতি বিঘাতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে।
শেখর ইউনিয়নের চর শেখর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মোঃ মাহবুবুর বলেন, এবার আমি এক একর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। তাতে প্রায় লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। বর্তমানে যে বাজার দর তাতে আমাদের খরচও উঠবে না, বড় লোকসানে পড়তে হবে। তবে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে আমাদের দেশের পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে কৃষকদের লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
নগরকান্দা উপজেলার পুরাপাড়া গ্রামের চাষি নুরইসলাম মোল্লা বলেন, সার-ওষুধ, সেচ, শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহনসহ সব মিলিয়ে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার অধিক খরচ হয়েছে। তাতে দাম না বাড়লে বড় লোকসানে পড়তে হবে।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ জিয়াউল হক বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফরিদপুরে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। এবার ৩৫ হাজার ৮৭৬ হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজের চাষ হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে ফলনও বাম্পার হবে। তবে দামের বিষয়টিতে আমাদের হাত নেই। আমরা ভালো ফলনে এবং বিভিন্ন বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ ও সহোযোগিতা করে থাকি।