এবছর দাম অনেকটা বেশি
সংযম ও ত্যাগের মাসে বরিশাল নগরীর প্রতিটি অলিগলি থেকে শুরু করে হাট-বাজারে জমে উঠছে ইফতার আয়োজন। প্রতিদিন বিকাল চারটার পর থেকেই নামিদামী ইফতার পণ্যের দোকানগুলোর পাশাপাশি ফুটপাতের ইফতারের দোকানগুলোতে বাড়ছে ক্রেতাদের ভীড়। প্রতি বছরের চেয়ে এবার ইফতার আয়োজনে অনেকটা নতুনত্বের ছোঁয়া থাকলেও দামটাও গত বছরের থেকে অনেক বেশি। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে ইফতার সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
তবে প্রতিবারের মতো এবারও বরিশালের ইফতার বাজার অনেকটাই নামকরা হোটেল-রেস্তোরার দখলে রয়েছে। পাশাপাশি সড়কের পাশে মৌসুমী দোকানিরাও ইফতার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন। অপরদিকে ইফতার বাজারের পাশাপাশি রমজানে ফলের বাজারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। যদিও গত বছরের মতো লিচু,আম-কাঁঠালের দেখা মেলেনি বাজারে। তবে খেজুর, পেয়ারা, পেঁপে, কলা, কমলা, আপেল, মালটা, তরমুজের দখলেরয়েছে বাজার।
নগরীর সদর রোড, বাংলা বাজার, লঞ্চঘাট, বাজাররোড, বগুড়া রোড, বটতলা, রুপাতলী, নতুন বাজার, চৌমাথা, নথুল্লাবাদ সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার হোটেল-রেস্তোরা থেকে শুরু করে রাস্তার পাশের অস্থায়ী দোকানে বিক্রি হতে দেখা গেছে ইফতার সামগ্রী।
নামি-দামী রেস্তোরা ও হোটেলগুলো ইফতারি বিক্রির জন্য অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করেছে। রেস্তোরার সামনে বাহারি নকশায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে ইফতার বিক্রির জন্য। যেখানে ছোলা, বুট, মুড়ি, পিঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ডিম চপ, দই বড়া, ডাবলির ঘুঘনি, মিষ্টি, শাহী হালিম, গরু-মুরগি-খাসির হালিম, কাবাব, সবজি পাকোড়া, মাংসের চপের পাশাপাশি অনেকে তাদের নিজস্ব বিশেষ আয়োজনসহ মুখরোচক নানা ইফতার পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে বিক্রেতারা।
এর মধ্যে নগরের ঐতিহ্যবাহী নাজেমস, এরাবেলা, রোজ গার্ডেন, গার্ডেন ইন রেস্তোরা, লেক ভিউ, হান্ডি কড়াই, হট প্লেট, তাওয়া, জাফরান, হুমাহুম, রিভার ক্যাফে, রয়েল,আকাশ সহ বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান গুলোর দখলে রয়েছে ইফতার বাজার। এসব রেস্তোরা গুলোতে খুচরচা ইফতার বিক্রির পাশাপাশি বেসিক, প্লাটিনাম, প্রিমিয়ামসহ নানান নামে প্যাকেজ ইফতারি বিক্রি হচ্ছে। তবে এবার বরিশালের ইফতার বাজারে ব্যতিক্রম ও আলোচিত আইটেম হচ্ছে ‘মাটন খেপসা’।
ইতিমধ্যে ভোজনরসিকদের মাঝে খাবারটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আরব দেশের জনপ্রিয় এই খাবারটি তৈরি করে আলোচনায় এসেছে নগরীর চৌমাথা এলাকার এরাবেলা রেস্টুরেন্ট। খেপসা মূলত ইয়েমেনি খাবার। আরব দেশগুলোতে সবাই এটি পছন্দ করে। খেপসা হচ্ছে বাসমতী চাল ও বিশেষভাবে তৈরি মাংসের মিশ্রণ। চিকেন, বিফ, মাটন, এমনকি মাছ দিয়েও খেপসা তৈরি করা হয়। বিশেষ এই আইটেম প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে আস্ত খাসির আকার ভেদে ৯০০০ টাকা থেকে শুরু।
এছাড়াও এখানে খাসির লেগ রোস্ট, মান্দি সহ বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় খাবার পাওয়া যাচ্ছে। আর জনপ্রিয় এই খাবার তৈরি করছেন সেফ মো. বাচ্চু মিয়া। এছাড়া নগরীর ঐতিহ্যবাহী নাজেমস রেস্তোরার জামাই জিলাপিতে গত কয়েক বছর ধরে ভোজন রসিকদের ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে। অত্যন্ত সুস্বাধু ও আকারে বড় একটি জিলাপি ৫ জনের একটি পরিবারের সবাই খেতে পারে। এছাড়াও সাধারনত রমজানের ইফতারে নাজেমস মানেই ব্যতিক্রমী কিছু ও ভিন্ন স্বাদের সমারোহ। গরুর হালিম, শাহী জিলাপি ও নাজেমস এর জর্দার সুনাম বরিশাল ছাড়িয়ে আশেপাশের জেলাতেও সুপরিচিত এখন।
বাচ্চু মিয়া বলেন, দেশের মানুষকে এরাবিয়ান ও ইন্ডিয়ান খাবারের স্বাদ দিতে এবার বরিশালের ইফতার বাজারে এই ব্যতিক্রম আয়োজন করা হয়েছে। এরাবেলার ম্যানেজার সৈয়দ মো. জাবেদুর রহমান জানান, প্রথম দিন থেকেই তাদের ইফতার সামগ্রী বেচা-কেনা ভালো হচ্ছে। ইফতারিতে এখানে কাচ্চি বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও, মুরগি মোসাল্লাম, খাসির রান রোস্ট,চিকেন বারবিকিউ, বোরহানি, ফিরনি, হালিম, বিভিন্ন ধরনের পিঠা, চিকেন কাবাব, চিকেন পুলিসহ বিভিন্ন আইটেম।
আরএস