প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিনে রাতে অবাধে মাটি কাটা হচ্ছে। অধিক হারে মাটি বাহি ট্রাক চলাচলে কারণে খালাখন্দ সৃষ্টি হয়ে বেহাল দশা গ্রামীণ সড়কের।
কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলায় আইন অমান্য করে প্রকাশ্যে কাটা হচ্ছে সরকারি জমির মাটি। বেপরোয়া মাটি ব্যবসায়ীরা মানছেন না কোন বিধি-নিষেধ। উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের গোলাপনগর গোপিনাথপুর এলাকার বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ইপিজেড প্রস্তাবিত জমি থেকে মাটি তোলা হচ্ছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ ফুট গভীর করে। এখান থেকে মাটি খননের সরকারি অনুমতি না থাকলেও মাটি তোলা হচ্ছে অবাধে। জোরপূর্বক মাটি কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। এতে ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে অসহায় কৃষকরা। নদীর বাঁধ রক্ষা সহ ফসলি জমির ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে দ্রুত অবৈধ মাটি ব্যবসা বন্ধের দাবি স্থানীয়দের ।
উপজেলার মেঠো পথ তৈরি করে মাটি ও বালি বহন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। কৃষি জমির বিনষ্টের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ বীড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। প্রচন্ড ধুলাবালির কারণে পরিবেশ দূষণও হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত ভেকুর সাহায্যে পুকুর বানানোর মতো করে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ করেও সমাধান না পাওয়ার অভিযোগ ভেড়ামারা উপজেলা বাসীদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, মাটি কেটে ট্রাকে লোড দেওয়া হচ্ছে। অনুমতি বা অনুমোদন আছে কিনা এই প্রশ্ন জবাব না দিয়ে সবাই এলাকা ত্যাগ করে। অপরিকল্পিত মাটি কাটার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা নুরুল আমিন বলেন, মাটি আনার জন্য রাস্তা করে, কৃষি জমি বিপন্ন করে, পানির প্রবাহ নষ্ট করে কাজ করে যাচ্ছে। এখানে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে মাটি কাটায় এবং ড্রাম ট্র্যাক, ট্রলি চলাচলের কারণে অতিষ্ঠ গ্রামবাসীরা। ট্রাক থেকে মাটি রাস্তায় পড়ে যাওয়ায় পথচারীদের চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটে চলেছে। দ্রুত বিষয়টি নিয়ে করা পদক্ষেপে দাবি তোলা হয়েছে। প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ। মাটি মাফিয়াদের কারণে সাহস করে কিছু বলতে পারছেন না ক্ষুদ্দ গ্রামবাসীরা। মূলত এই মাটি ইট ভাটায়, জায়গার ভরাট কাজে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে।
ভেড়ামারা উপজেলার সচেতন মহল জানান, ভেড়ামারা উপজেলার বাগগাড়ি পুল, কলেরঘাট ও বেপজা জায়গার মাটি দিনে রাতে পাচার করে দিচ্ছে একটি চক্র। এইসব মাটি ইটভাটায়, বসতবাড়ি ও ভরাট কাজে এইসব মাটি ও বালির ব্যবহার হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ৩০ মার্চ সকালে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরেজমিনে গিয়ে কাউকে না পেয়ে চলে আসেন। তাহলে তারা কি আগে থেকে সংবাদ পেয়ে যায় যে আজ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অভিযানে বের হবেন।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার হাসিনা মমতাজ বলেন, আমি আগে কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি, অর্থদণ্ড দিয়েছি, ভবিষ্যতে এই অভিযান চলমান থাকবে ।
তিনি আরো বলেন, রাতের আধারে শুনেছি কিছু অসাধু ব্যক্তি সরকারি জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে। এই বিষয়ে আমি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এর সাথে আলাপ করে তাঁর নির্দেশে আমি ভেড়ামারা থানার অফিসার্স ইনচার্জ বরাবর চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি রেকসোনা খাতুন জানান, আমি নিজে কয়েক বার সরকারি জমির মাটি কেটে নেয়ার অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেছি।এই অভিযান চলমান থাকবে।
ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম এর সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা আমাকে কোন চিঠি দেয়নি। তবে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশের কোনো সহযোগিতা চাইলে আমি সহযোগিতা করবো।
আরএস