সনাতন পদ্ধতি ফেলে রেখে সব কিছু যখন আধুনিক। তখনও আবাদি জমিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগে সচেতনার অভাব দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার মানুষের মাঝে। এতে তাদের মাঝে দেখা দিচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদী মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাব সহ মানব দেহের নানা জটিল সমস্যা। একই চিত্র পুরো জেলা জুড়ে। কৃষকদেরকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান সহ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সচেতনতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দেয়ার পরও কৃষক সচেতন হচ্ছে না বলে অভিযোগ কৃষি বিভাগের।
চলতি ইরি মৌসুমে কৃষক ব্যস্ত জমিতে। আবার মধুমাস জ্যেষ্ঠকে সামনে রেখে ব্যস্ত আম ও লিচুর বাগান মালিক। সবুজ বিস্তৃত মাঠে ধানের বিভিন্ন রোগ দমনে এবং পোকার হাত থেকে রক্ষায় হরহামেশাই করতে হয় বিভিন্ন কীটনাশক স্প্রে। পাশাপাশি জমি ও ধানের পুষ্টি জোগাতে ছিটাতে হচ্ছে নানা রকম রাসায়নিক সার।
একই ভাবে আম-লিচু সহ অন্যান্য বাগানে ফলের রোগ দমনেও নানা রকম কীটনাশক স্প্রে করছে বাগান মালিকরা। তাদের কারোর মাঝেই নেই কোন প্রকার স্বাস্থ্য সচেতনতা। মাথায় ক্যাপ, নাকে মাস্ক, চোখে চশমা কিংবা শরীরে বিশেষ পোশাক পারসোনাল পোটেকশন ইকুয়েপমেন্ট (পিপিই) পরিধান করার কথা থাকলেও, তা শতভাগ কৃষক মানছেন না। এতে নিজের অজান্তেই জটিল স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে তারা।
ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, এই উপজেলায় মোট জমির পরিমান ১৪ হাজার ৮৭৪ হেক্টর। এরমধ্যে চাষ যোগ্য জমি ১২ হাজার ১৮৪ হেক্টর জমি। এসব জমির মধ্যে শুধুমাত্র ধানের চাষ হয় ৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ কৃষক জমিতে কিংবা বাগানে সার প্রয়োগ ও কীটনাশক স্প্রে করার আগে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিশ্চিত করার কথা জানে। তবে নানা অজুহাতে তারা তা মানছে না। যত্রতত্র ভাবেই তারা এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার বাহিরে গিয়ে যত্রযত্র কীটনাশক স্প্রে করার ফলে কীটনাশক নিঃস্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করছে মানব দেহের ভিতরে। এতে অনেকে ভুগছেন দীর্ঘ মেয়াদী মাথাঘোড়া, মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাব সহ নানা রকম জটিল রোগে। অনেকে ক্যান্সারের মত মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
রানীগঞ্জ বাজারের কশিগ্রাড়ী গ্রামে নিজ ধানের জমির ধারে ইউরিয়া, পটাস ও ফসফেট সার মিশ্রণ করছে কুদ্দুস আলী। তিনি দু’হাত দিয়ে সার সার গুলো মিশ্রণ করছেন। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার বাপ-দাদাও এভাবে জমিতে সার ছিটাইছে। মাস্ক বা হাতমোজা পড়া লাগেনি। আমিও এভাবে সার ছিটিয়ে আসছি।
পৌর এলাকার নুরজাহানপুর গ্রামে ধানের জমিতে কীটনাশক স্প্রে করছিলেন একাব্বর মিয়া নামে এক কৃষক। তিনি বলেন, আমি মোটামুটি জানি এসব বিষ স্প্রে করার আগে নিজের শরীরকে সুরক্ষিত করে নিতে হয়। তবে আসলে আমরা এসব করিনা।
স্বাস্থ্য সুরক্ষার বাহিরে এসে এসব কীটনাশক স্প্রে করার ফলে শারীরিক কোন সমস্যা হয় কিনা! এমন প্রশ্নে একাব্বর মিয়া বলেন, এভাবে স্প্রে করছে মাঝে মাঝে মাথা ধরে, মাথা ঘোরে এবং বমি বমি লাগে। সারাদিন জমিতে কাজ করে বাড়িতে গেলে রাতে এই সমস্যা গুলোতে অনূভব হয়।
ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মনিরুজ্জামান মুরাদ বলেন, প্রতি বছর এই মৌসুমে রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বৃদ্ধি পায়। এদের মধ্যে অধিকাংশজনই সচেনতার অভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রকম রোগে। সচেনতার বাহিরে গিয়ে কীটনাশক স্পে করলে ক্যান্সার সহ নানা রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বাড়ছে কৃষকদের।
এদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান বলেন, আমরা সারা বছরই কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কীটনাশক স্প্রে করার পূর্বে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সচেতনতা নিশ্চিত করতে কঠোর তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি। তবে অধিকাংশজনই তা মানছেন না। আগামী আমরা এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে আরো বিশেষ উদ্দ্যোগ গ্রহণ করবো।
আরএস