ময়মনসিংহের নান্দাইলে চোর চক্রের উৎপাত দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ধর্মীয় ও বাঙ্গালির বিভিন্ন উৎসবকে সামনে রেখে ব্যাংক প্রতিষ্ঠান সহ জনবহুল সেবা প্রতিষ্ঠান ও মার্কেটে খুবই তৎপর এ চক্রটি। সেবা নিতে আসা সেবা গ্রহিতা ও ব্যাংকের বৃদ্ধ ও মহিলা গ্রাহকরাই যেন তাদের মূল টার্গেট।
দিন দুপুরে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চোর চক্রটি। তবে ধারনা করা হচ্ছে এ চক্রটির মধ্যে মহিলা ও পুরষ সদস্য বিদ্যমান। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোন অসাধু ব্যক্তি বা দালাল জড়িত আছে বলে খুবই সহজেই তথ্য আদান-প্রদান সহ টাকা হাতিয়ে নিতে পারছে এ চক্রটি।
ফলে ব্যাংকে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো যেন ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। জানা গেছে, নান্দাইল উপজেলা সদর সোনালী ব্যাংক শাখা প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তুলতে আসা মহিলা ও বৃদ্ধ গ্রাহকরা প্রায়ই চক্রটির শিকার হচ্ছে। নান্দাইলে সোনালী ব্যাংকের মহিলা গ্রাহকদের সাথে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন জোর কর্মতৎপরতা দেখা যায়নি।
এতে করে উক্ত চোর সিন্ডিকেট চক্রটি তাদের অপকর্মে দিন দিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এ নিয়ে গ্রাহক এবং সুশীল সমাজ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
গত বুধবার দুপুরে নান্দাইল সোনালী ব্যাংক থেকে আমেনা আক্তার নামে এক গ্রাহক ১ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। পরে বাড়ি ফেরার পথে নান্দাইল মডেল থানার সামনে এসে দেখতে পান যে, তাঁর ব্যানিটি ব্যাগের চেইন খোলা। ব্যাগের ভিতরে রাখা ১ লাখ টাকা উধাও। এসময় আমেনা আক্তারের মাথায় যেন আসমান ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা হয়। টাকা হারিয়ে তিনি দিশেহারা।
এ বিষয়ে আমেনা আক্তার ও তাঁর মা রোকেয়া আক্তার ধারনা করেন, ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বের হওয়ার সময় চোর চক্রটি তাঁর এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। আমেনা আক্তার নান্দাইল উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের উদং মধুপুর গ্রামের কাঞ্চন মিয়ার স্ত্রী।
এছাড়া নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা সেবা গ্রহিতাদের নিকট থেকে অহরহ (প্রায়ই) অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। অথচ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ও প্রতিষ্ঠানের সামনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন থাকা সত্বেও চোর চক্রটির সন্ধান না পাওয়ার বিষয়টি সমাজে প্রশ্নবিদ্ধ। পাশাপাশি উক্ত চোর চক্রটিকে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য জোর দাবী জানানো হয়েছে।
নান্দাইল সোনালী ব্যাংকের মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামরা স্থাপন না করার বিষয়টিও লজ্জাজনক বলে দাবী করছেন ব্যাংকের গ্রাহকগণ। এ বিষয়ে অত্র সোনালী বাংকের শাখার ম্যানেজার জহিরুল হক বলেন, ওই মহিলা টাকা হারিয়ে ব্যাংকে এসে কান্না করছিলেন। পরে স্টাফদের কাছ থেকে জানতে পারি মহিলার টাকা চুরি হয়ে গেছে।
বিষয়টি খুই দুঃখজনক। এছাড়া উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিসি ক্যামেরা স্থাপন না করলে আমাদের করণীয় কি? এ দিকে নান্দাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, এ ঘটনায় কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করছি।
পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে অতিরিক্ত ডিইউটির ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। নান্দাইল উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির উপদেষ্ঠা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হাসান মাহমুদ জুয়েল বিষয়টির প্রতি খুবই দু:খ প্রকাশ করে বলেন, চক্রটিকে ধরার জন্য আমরাও চেষ্টা করছি।
এছাড়া পুলিশ প্রশাসনকে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যাতে করে অবিলম্বে চক্রটিকে আইনের আওতায় আনা হয়।
এমএইচআর