হবিগঞ্জের বাহুবলে ৫/৬টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অভিনব পদ্ধতিতে নদীর মতো পাহাড় কেটে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন যাবত বালু উত্তোলন করে আসছে একটি সিন্ডিকেট। গত ৩/৪ বছরে উপজেলা প্রশাসন কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করলেও রহস্যজনক কারণে থামেনি পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাহুবল উপজেলার পুটিজুরী ইউনিয়নের দি-প্যালেস লাক্সারী রিসোর্ট সংলগ্ন নিপুর রাবার বাগান থেকে দীর্ঘদিন যাবত অভিনব পদ্ধতিতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালুগুলো গাড়ি বোঝাই করে পুটিজুরী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সামন দিয়েই পাচার করে আসছে ওই সিন্ডিকেট।
পুটিজুরী এলাকার জব্বার মিয়া নামের এক ব্যক্তি জানান, অনেকদিন ধরে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে ছড়া, পাহাড় ও কৃষিজমি কেটে বালু উত্তোলন করে আসছে। যা আইনত সম্পূর্ণ অবৈধ। ফলে আশপাশের কৃষিজমি যেভাবে নষ্ট হচ্ছে তেমনই ভাবে হুমকির মুখে পড়েছে পাহাড়ের পরিবেশ।
তিনি আরও জানান, একদিকে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে বালু উত্তোলনের ফলে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চক্রটি পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন করে আসছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ওই অবৈধ সিন্ডিকেট বালু খেকোদের বালুর স্তুপে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কোন কোন সময় নিপুর বাগানে ৩০/ ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তাদের ড্রেজার মেশিন,পাইপ আজও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে,কোন সমস্যা হয় না! পরে আবারো সু-কৌশলে পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন করে পাচার করে চক্রটি, থামেনা বালু উত্তোলন ও পাচার। তবে এ বিষয়ে রূপাইছড়া রাবার বাগানের নীরবতা আর স্থানীয় প্রশাসনকে দায়ী করছেন এলাকাবাসী। দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ এখান থেকে বালু উত্তোলন করার কারনে বাগানের কৃষি ঠিলাগুলো নদীর ন্যায় পরিনত হয়েছে। তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রূপাইছড়া রাবার বাগানের উচু ঠিলাগুলো।
আর এসব বালু খেকোদের টার্গেট রূপাইছড়া রাবার বাগানের ঠিলাগুলোকে ধ্বংস করা। উপজেলার পুটিজুরী ইউনিয়নের কুমেদপুর গ্রামের বাসিন্দা, ইংল্যান্ড প্রবাসি শাহ আহমেদুর রহমান সুফি`র মালিকানাধীন নিপু রাবার বাগান নামক এ বাগান থেকে তারই পুত্র, ইংল্যান্ড প্রবাসি শাহ ওয়াহিদুর রহমান নিপুর দেশে থাকা তার কিছু দলবল দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছেন। আবার উত্তোলিত বালুগুলো ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পুটিজুরী হাইস্কুল সংলগ্ন নিপুর প্রতিষ্ঠিত স্কুল শাহ জালাল উদ্দিন বোখারী স্কাইলাইন একাডেমি মাটে স্তুপ করে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হচ্ছে। ওই বাগানের পাহাড়ী এলাকায় বর্তমানে ৫/৬ টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিনে রাতে তোলা হচ্ছে বালু। বাহুবল উপজেলা প্রশাসন এ পর্যন্ত কয়েকবার এ চক্রটিকে জরিমানা করলেও তাদের বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছেনা।
স্থানীয়রা আরও বলেন, ওই বালু খেকোরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এ অবৈধ বালু উত্তোলন ও ব্যাবসা করে আসছে।প্রশাসন তাদেরকে হাতেনাতে পেয়ে ৩০/৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ঠিকই কিন্ত মেশিন বা পাইপ কিছুই ধ্বংস বা জব্দ করা হয়না।এতে বুঝা যাচ্ছে, প্রশাসন ম্যানেজ করেই এই বালু উত্তোলন ও ব্যাবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। শুধু পুটিজুরী এলাকাই নয় মিরপুরের দক্ষিনাঞ্চল মহাশয়ের বাজার এলাকায় মরা খোয়াই নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। রশিদপুর দ্বারাগাও এলাকা থেকেও একইভাবে তোলা হচ্ছে বালু।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার( ভূমি) মো. রুহুল আমিন বলেন, আমার জানামতে এখানে বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। যদি সত্যি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়ে থাকে তাহলে আমরা দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করব।
বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহুয়া শারমিন ফাতেমার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইতিপূর্বে কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে, কিন্তু বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারলাম ওই চক্রটি বালু উত্তোলনে সক্রিয় রয়েছে। অপরাধী যেই হউক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচআর