ফরিদপুরে বিষ প্রয়োগে ৩০ লাখ টাকার মাছ নিধন

ফরিদপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৩, ০৬:০৪ পিএম
ফরিদপুরে বিষ প্রয়োগে ৩০ লাখ টাকার মাছ নিধন

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বিলচাপাদহে বিষ প্রয়োগ করে বিপুল পরিমাণ মাছ মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় সংশ্লিষ্ট মৎস্যজীবীদের মাঝে তীব্র হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্যের। এ ঘটনায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। 

বুধবার (৫ এপ্রিল) সকালে জেলেরা দেখতে পান বিলের সমস্ত মাছ মরে ভেসে উঠেছে। বিলের সর্বত্র এখন মরা মাছের ছড়াছড়ি। স্থানীয়রা বিলে ভিড় জমাচ্ছেন মরা মাছের দৃশ্য দেখার জন্য। ইতিমধ্যেই মরা মাছের গন্ধে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠতে শুরু করেছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় জেলেরা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারী এ বিলটিতে পরিকল্পিতভাবে মাছের চাষ হয়ে আসছে। বরাবরের ন্যায় এবারও কিছুদিন আগে বিলে চলতি মৌসুমের মাছ চাষের উদ্বোধন করা হয়। গত কয়েকদিনে বিলে প্রায় সাড়ে তিনশত মন বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। এছাড়াও বিলে শোইল,বোয়াল, আইড়সহ নানা জাতের প্রাকৃতিক মাছ ছিলো। 

বিলপাড়ের বেড়াদি গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ মাতুব্বর বলেন, বিলে আমাদেরও শেয়ার আছে। এলাকার হাজার হাজার মানুষ এ বিলের মৎস্যচাষের উপর নির্ভরশীল। গত ১৫ দিনে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাছ ছাড়া হয়েছে। রাতের আঁধারে বিষ প্রয়োগ করে সমস্ত মাছ মেরে ফেলা হয়েছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ হুমায়ন কবির মোল্লা বলেন, বিলকে ঘিরে স্থানীয় জেলেরা রাতদিন পরিশ্রম করেন। তাদের জীবীকার একমাত্র অবলম্বন এই বিলচাপাদহ। কিন্তু এবার তাদের শেষ করে দেয়ার পায়তারা শুরু হয়েছে। এলাকার একটি সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠী নানা অযুহাতে এবার শুরু থেকেই বিলে মাছ চাষের বিরোধিতা করে আসছে। তারা জেলেদের হাত থেকে বিলচাপাদহকে কেড়ে নিতে চায়। ওই অশুভ চক্রটির ইশারায় বিলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ ঘটনায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

বিলচাপাদহ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আশুতোষ বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক লক্ষিকান্ত রায় চরম হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। জেলেরা বিলে মাছ চাষ করে ভালো থাকুক এটা এলাকার একটি মহল চায়না। আমাদেরকে বিল থেকে উচ্ছেদ করতেই বিষ দিয়ে সব মাছ মেরে ফেলা হয়েছে। এতে আমাদের কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। 

তারা যুক্তি দেখিয়ে বলেন, পানিতে অক্সিজেনের অভাব হলে শুধু অবমুক্ত করা পোনা মাছ মারা যাবার কথা কিন্তু এক্ষেত্রেতো সকল নেচারাল মাছ এমনকি জলজ পোকামাকড় পর্যন্ত মরে ভেসে উঠছে। এতে প্রমাণ হয়,পরিকল্পিত ভাবেই বিলে বিষ প্রয়োগ করে আমাদের ক্ষতি করা হয়েছে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন,পুলিশ প্রশাসন, মৎস্য অফিস সহ আমরা সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তরগুলোকে বিষয়টি অবহিত করেছি। ইতিমধ্যে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিলের পানি ও মরা মাছের পরীক্ষা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ বিষয়ে বিল পাড়ের বাসিন্দা ও সাতৈর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবর রহমান বলেন, ঘটনাটি খুবই দূঃখ জনক। মৎস্য জীবীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে কিভাবে মাছ মরেছে সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। অবশ্য আমার ধারণা,বিলের দখল-কর্তৃত্ব নিয়ে মহল বিশেষের চলমান ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে এই ধ্বংসাত্মক তৎপরতা সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। 

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাতৈর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রাফিউল আলম মিন্টুর মোবাইলে বারবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, বিলচাপাদহ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আবার বিলে মাছের পোনা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আসলে সেখানে কি ঘটছে পরে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।

এমএইচআর