শেষ মুহুর্তেও ক্রেতা শূন্য কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টস পল্লী

শামসুল ইসলাম সনেট, কেরানীগঞ্জ প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৩, ০৫:৪৮ পিএম
শেষ মুহুর্তেও ক্রেতা শূন্য কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টস পল্লী

* গুদামে হাজার কোটি টাকার পোষাক, 
*আমদানি খরচ ও কাপড়ের দাম বৃদ্ধি 
*কম দামি মালের চাহিদা বেশি 
*চাহিদার তোলনায় জোগান বেশি
*১৫ রোজা চলে গেলেও আশানুরূপ বিক্রি হয় নি।
*খুচরা পাইকারের অপেক্ষায় ব্যাবসায়ীরা

ঈদের বাকি মাত্র ১৩ দিন! তবে এখনো আশানুরূপ বিক্রি হয় নি   দেশের তৈরী পোশাকের সব চেয়ে বড় পাইকারি বাজার কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টস পল্লীর। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশের মত গত ৩/৪ মৌসুম বিখ্যাত এই কাপড়ের মার্কেটেও  ছিল না তেমন বেচাকেনা। তবে এবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাই ধার দেনা করে বাড়িয়েছেন জামা কাপড়ের মওজুদ তবে অধিকাংশ রোজা চলে যাওয়ার পরও কাঙ্খিত মালামাল বিক্রি করতে না পাড়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ সামনের কয়েকদিন বেশি বিক্রির আশা করলেও অনেকে বলছে গোদামেই পড়ে থাকবে তাদের অধিকাংশ কাপড়।

তবে ব্যবসায়ী নেতারা বলছে অন্যান বছরের তুলনায় এবার বাজার পরিস্থিতি ভালো।

শনিবার (৮ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেরানীগঞ্জের আগানগর ও শুভাঢ্যা এলাকার বিভিন্ন মার্কেটের ছোট বড় প্রায় ১০ হাজার সো রুমে সাজানো রয়েছে রংবে রং এর বাহারি জামা কাপড়। দোকানিদের কেউ কাপড় গুছাচ্ছে, কেউ পরিস্কার করছে কেউবা আবার ব্যস্ত খুচরা পাইকারদের সাথে দামাদামিতে।

তবে অধিকাংশ দোকানদারই অলস সময় পাড় করছে! ক্রেতা না থাকায় মালিক কর্মচারীরা ব্যস্ত মোবাইল ফোন নিয়ে, কেউ কেউ করছে খুনসুটি। দোকানের সামনে লোক যেতে না যেতেই পাইকার ভেবে ডাকাডাকি শুরু করে দোকানিরা, সাংবাদিক পরিচয় জানার পর কষ্টের পাহাড় নিয়ে দাঁড়িয়ে যান দোকান মালিক কর্মচারীরা। 

মাহবুব আলম সুপার মার্কেটের নাঈম এন্টারপ্রাইজের মালিক পনিরুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত ভ্যাট ও বেশি দামে চায়না থেকে মাল এনেছিব ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে।  অন্যান্য বছরগুলোতে রোজা শুরুর ১০ থেকে ১৫ দিন আগে থেকে জমেও উঠে বেচাকেনা। তাই বাড়তি চাহিদা বিবেচনায় বাড়তি কাপড় মজুত করেছি কিন্তু কোন কাস্টমার নেই। হয়তো সব কাপড় রয়েই যাবে। আর ঈদের পর পুরাতন  মডেলের জামাকাপড় বিক্রি করতেও সমস্যা হবে।

একই মার্কেটের এসবি পয়েন্টের মালিক মনির হোসেন জানান, অন্যান্য বছরগুলোতে যে সময় দোকানিদের দম ফেলানোর সময় থাকেনা এবার তারা অলস সময় পাড় করছে।  এই সময় বিক্রি হয়ে যায় দোকানের অধিকাংশ কাপড় তবে এবার গুদামে কোটি কোটি টাকার পণ্য পড়ে আছে। দিনে বিক্রি হওয়ার কথা ৮/১০ লাখ টাকা তবে এখন ২/৪ লাখ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারছিনা। তিনি আরও বলেন, গতবছর করোনা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক নিয়েও এর চেয়ে ৯অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে, সে তুলনায় এবার খুবই কম। 

কালিগঞ্জের জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের এটি ব্রান্ডের  ম্যানেজার  আকাশ জানান, এখনো জমে উঠেনি বাজার, অন্যান্য বছরগুলোতে এই সময় আমাদের বিক্রি শেষ হয়ে যায়,তবে এবার বিক্রি নেই। আর ২০/২২ রোজার পরতো বিক্রিই  হবেনা। 
তবে কমদামি পোষাকের বাজার কিছুটা ভালো। আলম টাওয়ারের নাবিলা এন্টারপ্রাইজ এর মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, কাপড়ের দাম বেড়ে গেছে, এখন একটা  প্যান্টের উৎপাদন খরচ  ১৪/১৫শ টাকা।  এক‍‍`শ টাকা লাভে বিক্রি করতে চাইলে কাস্টমার নেয় না। আগে এই সময় প্রতিদিন বিক্রি হতো তিন থেকে পাচ লাখ টাকা আর এখন ৫০/৬০ হাজার টাকা। 

খাজা সুপার মার্কেটের মায়ের দোয়া গার্মেন্টস এর মালিক আক্তার হোসেন বলেন, ইন্ডিয়া থেকে কাপড় কিনে দেশে এনে পাঞ্জাবি উৎপাদন করি।কাপড়ের দাম বেড়ে গেছে, অতিরিক্ত ট্যাক্সে কাপড় আমদানি করতে হয় সে তুলনায় বিক্রি করা যায় না। আগে প্রতিদিন ১/১.৫ লাখ  টাকা বিক্রি করলেও এখন বিক্রি মাত্র ২০/৩০ হাজার টাকা।

বগুড়া থেকে আসা খুচড়া বিক্রেতা মাহবুব বলছেন, আগে অনেক মাল নিতাম তবে এবার বেছে বেছে বুঝে শুনে নিতে হচ্ছে। আর দামও বেশি! প্রতিটি প্যান্টে  এখন এক‍‍`শ দেড়শ টাকা করে বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে কিন্তু সে অনুযায়ী বিক্রি করতে পারিনা। 

খুলনা থেকে আসা শাহিদা বেগম বলেন, আগে ৩০/৪০ হাজার টাকার কাপড় নিতান এখন ১২ হাজার টাকার কাপড় নিলাম, এগুলো বিক্রি হবে কিনা আল্লাহ জানে।

তবে ভিন্ন কথা বললেন কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ও দোকান  মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মুসলিম ঢালী। মুসলিম ঢালি জানান, এটা বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় কাপড়ের পাইকারি বাজার। এখানে ছোট-বড় প্রায় ৫ হাজার কারখানা এবং ১০ হাজার শো-রুম রয়েছে যার সুফল পায় প্রায় ১০ লখ মানুষ। বিগত কয়েক বছর ব্যবসা পরিস্থিতি খারাপ থাকলেও এবার ভালো যাচ্ছে বলে জানান এই নেতা। তবে বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে শত ভাগ ব্যবসার আনুকুলে নেই বলেও স্বীকার করেন তিনি। তবে ছোট বড় সকল ব্যবসায়ীরাই বলছেন বিশ্ব পরিস্থিতির কারণেই বাজারের এ অবস্থা। সরকার যদি ব্যবসায়ীদের দেওয়া প্রণোদনা বজায় রাখে তবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব। তাছাড়া নগদ অর্থে মাল কিনে বাকিতে বিক্রি না করাও বিক্রি কমের অন্যতম কারণ বলছে অনেকে।

উৎপাদন কমিয়ে পরবর্তী ঈদ অর্থাৎ আগামী ঈদুল আজহার আগেই মওজুদ থাকা কাপড় বিক্রি করে মূলধন ফেরতের আশা ব্যবসায়ীদের।

আরএস