প্রকৌশলীর স্বাক্ষর জাল করে কাজ ভাগিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র

বরগুনা প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ১০, ২০২৩, ০৪:০৩ পিএম
প্রকৌশলীর স্বাক্ষর জাল করে কাজ ভাগিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র

জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোটি কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নিয়ে অবৈধ অর্থের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি শক্তিশালী ঠিকাদার চক্রের বিরুদ্ধে। 

বিভিন্ন জেলার সরকারি দপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বাক্ষর কম্পিউটারের মাধ্যমে স্ক্যান করে বসিয়ে শত শত কোটি টাকার কাজের জাল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে দরপত্র দাখিল করে মূল্যায়নের অধিক নম্বর নিয়ে এ প্রতারণা করছেন তারা। 

এমন সব অভিযোগ উল্লেখ করে ইতোমধ্যে পটুয়াখালীর নূর ই এলাহী আলম ইভান, মিজানুর আলম ওরফে স্বপন মৃধা, মো. রিয়াজ উদ্দিন এবং মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান হিরুর বিরুদ্ধে বরগুনা পাউবোর তালিকাভুক্ত ঠিকাদাররা মামলাও করেছেন।

যা পৃথক ভাবে পিবিআই, সিআইডি ও ডিবির অধীনে তদন্তাধীন রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য সূত্র অনুযায়ী, পটুয়াখালীর এ ঠিকাদার চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত মেসার্স আবুল কালাম আজাদ, এমডি মিজানুর আলম, মেসার্স মহিউদ্দিন আহমেদ, মেসার্স রিয়াজ উদ্দিন এবং মেসার্স আল মামুন এন্টারপ্রাইজ নামে ৫ টি লাইসেন্স দিয়ে এ কাজ করে আসছেন। 

মামলার বিষয়ে বাদী মো. মাঈনউদ্দীন আসাদ বলেন, তাদের জাল জালিয়াতির কারণে আমরা কোন ঠিকাদারি কাজ না পেয়ে নিদারুন ভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছি। এদিকে বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ড চক্রটির ৫টি লাইসেন্সে বরগুনায় তাদের ইজিপি দরপত্রে দাখিলকৃত নমুনা হিসেবে ৪০ টি জাল সার্টিফিকেট ‍‍`যাচাইশেষে সঠিক নয়‍‍` মর্মে মতামত দিয়ে প্রতিবেদকের কাছে ছায়ালিপি হস্তান্তর করেন। 

পাউবো পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন জানিয়েছেন, বরগুনা ছাড়াও সিলেট, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ইত্যাদি জেলা থেকে গড়ে ৮০-৯০টি করে সার্টিফিকেট যাচাই করে দেবার জন্য পাউবোর পটুয়াখালী দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। 

এর মধ্যে ৩০ টি সার্টিফিকেট সঠিক পাওয়া গেলেও অবশিষ্ট ৫০-৬০ টি সার্টিফিকেট জাল পাওয়া যায়। জাল সার্টিফিকগুলো ‍‍`যাচাইয়ান্তে সঠিক পাওয়া যায়নি‍‍` মর্মে মতামত দিয়ে বর্ণিত জেলাসমূহের পানি উন্নয়ন বোর্ড দপ্তরে অবহিত করা হয়েছে। 

পাউবো বরগুনা সূত্রে পাওয়া  জাল সার্টিফিকেটগুলোতে পাউবো বরগুনার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম ও মো. কাইছার আলমের স্বাক্ষর দেখে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন প্রতিবেদক। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরগুনার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও পটুয়াখালী সার্কেলের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক মো. কাইছার আলম বলেন, আমি যখন বরগুনায় ছিলাম তখন এগুলো টের পাইনি। 

সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) পরামর্শক আবু বকর বলেন, এত ভয়ঙ্কর জালিয়াতি কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করতে পারে না। অভিযুক্ত ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগাযোগের করলে তারা অভিযোগগুলো সত্য নয় বলে দাবি করেন। এ ব্যাপারে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, জালিয়াতির এ বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বোর্ডের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

এমএইচআর