সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে হুড়া সাগর। হুড়াসাগর নাম হলেও মূলত এটি একটি নদী। হুড়া সাগর নদীটির নামের সঙ্গে তার বর্তমান কোন মিল নেই। পানির বদলে এখন ফসল, গরু-ছাগলের চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এমনকি নদীটির মাঝখানে মানুষ বসত ঘর স্থাপনা করে বসবাস করছে।
বর্ষার ভরা মৌসুমে খানিকটা পানি থাকলেও সারা বছর জুড়েই পানি শূন্য থাকে হুড়া সাগর নদীটি । কালের পরিক্রমায় হুড়া সাগর নদীটি গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। এক পাশ ভেঙে আরেক পাশ গড়ে উঠেছে বালুচর। চরগুলো ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে ছোট ছোট গ্রামে।
নদীটির ঠিক মাঝখানে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পানি খাওয়ার পুরাতন কূপটি। কূপটিকে ঘিরে আছে নানা গল্প কাহিনী। কূপটিকে বলা চলে প্রাচীন পুরাতন স্থাপত্যের মধ্যে একটি। কূপটি কামারখন্দ উপজেলার রায়দৌলতপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ীয়া-চরবাঁশবাড়ীয়া গ্রামে নদীর মাঝামাঝিতে অবস্থান করছে। কূপটি গভীরতা প্রায় ৬০ ফুট লম্বা ৮ ফুট চওড়া।
এলাকাবাসী সূত্রে মতে বৃটিশ শাসন আমলে পাবনা জেলাধীন সিরাজগঞ্জ মহকুমার সময়ে এটি ১৯৩৬ সালের দিকে বৃটিশ সরকার তৈরি করেন। এলাকাবাসী বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির জন্য মূলত এটি তৈরী করেন। কূপটি তৈরির সময়ে চারপাশে অনেক বসাবাসরত ঘর ভিটা ছিল। কালের পরিক্রমায় নদীর গতিবেগ পরিবর্তন হওয়ায় বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের অধিকাংশ হুড়া সাগর নদীর পেটে চলে যায়।
একসময়ে বর্ষার মৌসুমে নদীতে প্রবাহিত পানির তীব্রস্রোত বিলীন হয়ে যায় কূপটির চারপাশে থাকা বসতঘরবাড়ি, গাছপালা, রাস্তাঘাট। এখন শুধুমাত্র কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কূপটি। কূপটির এখন বেহাল দশা যেকোন সময়ে তা বিলীন হয়ে যেতে পারে।
এলাকাবাসীর দাবি এটাকে যেন পুরাতন স্থাপনা হিসেবে প্রশাসন টিকিয়ে রাখে। কূপটি পুরাতন স্থাপনা হিসেবে ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারে। এটি পরিদর্শের জন্য আশেপাশে উপজেলা থেকে ঘুরতে আসে।
এ বিষয়ে বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মো. জুলফিকার আজাদ বলেন, আমার জন্মের পর থেকেই কূপটি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছি। ১৯৮৮ সালের ভারী বর্ষার সময়ে এটির কোন ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই। লোকমুখে শোনা যায় নানা ভয়ানক গল্পের কথা কূপটির আশে পাশে কেউ গোসল করতে নামলে তাদের কূপের দিকে দেও দত্ত টেনে নিয়ে যায়।
মো. শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, কূপটি ১৯৩৬ সালে বৃটিশ সরকার নিজ হাতে তৈরি করেন। বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান সরকার এর বড়ো চাচা কলিমুদ্দিন সরকারকে বৃটিশ সরকার কূপটি বানিয়ে দেয়। ১৯৭১ সালে বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায় পরে তা আর কোন সংস্কার করা হয় নাই। আজও পর্যন্ত তা দাঁড়িয়ে আছে অক্ষত ভাবে। কূপটির পাশে যাদের বাড়ি ছিলো ফইমুদ্দিন সরকার, মফিজ মন্ডল, ইব্রাহিম সরকার। কূপটির নিজস্ব জায়গা হলো আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান সরকার, হুরাসাগর নদীর তীরে আজও দাড়িয়ে আছে কুপটি যা কালের স্বাক্ষ্য বহন করে আসছে।
এআরএস