দেশ ভারত ও চীনা জুতার আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দেশীয় জুতা তৈরির ক্ষুদ্র শিল্প গুলো ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষুদ্র জুতা উৎপাদনকারীরা। পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে জুতা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কারিগররা।
এ উপজেলার প্রায় ২০-২২টি জুতা তৈরির কারখানা রয়েছে। এখন কারখানা গুলোতে বিরামহীন চলছে জুতা তৈরির কাজ। তবে জুতা তৈরির কাঁচামালের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
কারখানার মালিক ও এই শিল্পের সংশ্লিষ্টরা মূল্য বৃদ্ধির জন্য জুতা তৈরির কাঁচামালের আমদানিকারকদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন।
বুধবার বেলা ১১ টার দিকে সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন জুতা তৈরির কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, প্রচণ্ড গরমের ঘামে সিক্ত হয়ে জুতা তৈরির কাজ করছেন কারিগররা। কেউ জুতার রং করছেন। কেউ কেউ জুতায় আঠা লাগাচ্ছেন। এভাবেই কারিগরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জানা যায়, ঈদে সকলেরই চাই পোশাকের সাথে নতুন জুতা। পোশাক কেনার পরে মানানসই জুতার খোঁজ করেন সবাই। যাঁদের ব্র্যান্ডের জুতা কেনার সামর্থ্য নেই তাঁদের জন্য হাতে তৈরি জুতাই একমাত্র ভরসা। ঈদে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ক্রেতার কথা মাথায় রেখেই দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন জুতা তৈরির কারিগরেরা।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারদের চাহিদা পূরণে দিনরাত কাজ করছেন তারা। খুচরা ক্রেতাদের ভিড়ও দেখা গেছে স্থানীয় জুতা তৈরির দোকান গুলোতে। নিত্য নতুন ফ্যাশনের মানসম্মত ও টেকসই জুতা তৈরি হওয়ায় সিরাজদীখানের জুতা প্রশংসিত রয়েছে।
মো. ইলিয়াসের জুতার কারখানায় ৩ জন শ্রমিক মিলে জুতা তৈরির কাজ করছেন। এসময় কারখানার মালিক মো. ইলিয়াস জানান, ভারত ও চীনা জুতার আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দেশীয় জুতা তৈরির ক্ষুদ্র শিল্প গুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। সরকারী সহায়তা পেলে কাজের মান বাড়িয়ে হাতে তৈরি জুতা বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
তিনি আরো জানান, উপজেলার বিভিন্ন কারখানাগুলোতে পাইকারী এক ডজনের (১২ টি) নিচে জুতা বিক্রি হয় না। মান ও নকশার ওপর নির্ভর করে এক ডজন (১২) জুতার দাম পড়ে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। একটি কারখানায় নানান কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শ্রমিক প্রয়োজন হয়। যেমন ডিজাইন, সেলাই, কাটিং, সোল তৈরি, পেস্ট করা, রং করা, সলিউশন করা, আপার তৈরি, ফিতায় বেণি করা ইত্যাদি।
জুতা কারখানার একজন দক্ষ শ্রমিক দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা উপার্জন করলেও ঈদের সময় তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তাই মৌসুমে এতটুকুও সময় নষ্ট করার ফুরসত নেই যেন তাদের। আরেকজন জুতার কারখানার মালিক ইকবাল বেপারী বলেন, উপজেলার বিভিন্ন কারখানায় তৈরিকৃত জুতা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হচ্ছে।
এছাড়া তারা অর্ডারী জুতা তৈরি করে থাকেন ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী। এ কাজে নিয়োজিত শ্রমিক মো.রমজান জানান, ঈদকে সামনে রেখে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। অন্য বারের তুলনায় এবারের ঈদে তাদের কাজ অনেক বেশি। এত শ্রম দেয়ার পরও বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হলেও তাদের মজুরী আগের মতই রয়েছে।
দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে এ শিল্পের দিকে নজর দেয়া জরুরী। এ শিল্পে প্রয়োজনীয় পৃষ্টপোষকতা করলে শিল্পটির আরো বিকাশ ঘটবে বলে মনে করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.শরীফুল আলম তানভীর বলেন,উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারগুলোতে এখন জুতা তৈরির ছোট ছোট কারখানা তৈরি হয়েছে। এতে করে এখন ঢাকার শহরে গিয়ে ভালো মানের জুতা কিনে আনতে হয় না, হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। আমরা সব সময় তাদের খোজ খবর রাখছি। যদি কারো কোন প্রশাসনের সহযোগিতা লাগে আমরা অবশ্যই তাদেরকে সহযোগিতা করব।
এইচআর