মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান থানার প্রধান ফটকের কাছেই ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। আর ওই ভাগাড়ের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। সিরাজদীখান বাজার ও থানায় আসা মানুষজন বলছেন থানার প্রধান গেটের সামনে দাড়ালেই প্রকট দুর্গন্ধে বমি চলে আসে। এখানে এক মিনিটের জন্য দাড়ানোই যায় না।
বুধবার দুপুর ১ টার দিকে সিরাজদীখান বাজারের পূর্ব পাশে মুরগি পট্টি এলাকায় একটি ডোবায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মাছ,গরু ও মুরগির বর্জ্য ফেলার চিত্র দেখা গেছে। এতে করে ওই বর্জ্য পচেঁ বাতাসে ভেসে আসছে নাকে। পথচারী, গাড়িচালক ও দোকানিসহ আরো হাজারো মানুষ এই দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এই প্রকট দুর্গন্ধে কমাতে নেই কারোর উদ্যোগ। এ থেকে প্রতিকার চান সাধারণরা।
অন্য দিকে থানা ফটকের ৫০ ফিট দূরে আরেকটি ময়লা-ভাগাড়সহ সিরাজদীখান বাজারে আরো ৪-৫ স্থানে ময়লার ভাগাড় রয়েছে। সে গুলোতে ইচ্ছে মতো ময়লা ফেলানো হচ্ছে। এতে করে পরিবেশ দূষণসহ বাজারের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।
পথচারী ফেরদৌস হাসান বলেন, থানার গেটের সামনে আসলেই প্রকট একটি দুর্গন্ধ নাকে ভেসে আসে। খুব তাড়াতাড়ি ওই স্থান থেকে চলে আসতে হয়। যদি কখনো ওই স্থানে গাড়ির জন্য দাঁড়াতে হয় তাহলে বমি চলে আসে। কেউ উদ্যোগ নিয়ে এই দুর্গন্ধে কমানোর ব্যবস্থা করছে না। তাই প্রশাসনের কাছে অতি দ্রুত ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
অটোরিকশা চালক মো. রুবেল শেখ বলেন, থানার গেটের সামনে যাত্রী ওঠানোর জন্য মাঝেমধ্যেই অটোরিকশা ধার করে রাখি, কিন্তু সে সময় বাতাসে পচা দুর্গন্ধে নাকে ভেসে আসে। এতে করে বেশিক্ষণ ওই স্থানে থাকা যায় না। তাই বেশিরভাগ সময় থানার গেট থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করে থাকি। থানার সামনে দীর্ঘদিন এরকম পচা দুর্গন্ধ , কিন্তু কেউ উদ্যোগ নেয় না কমানোর। এটা আসলে ঠিক না।
সিরাজদীখান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের মুরগির বর্জ্য বাইরে ফেলি না। কারণ আমাদের এই মুরগির নাড়ি-ভুড়ি সব কিনে নিয়ে যায়। এগুলো মাছের খাবার হিসাবে আমরা বিক্রি করে থাকি। যেহেতু বিক্রি করে টাকা পাই, তাই বাহিরে ফেলি না। সব বালটিতে জমিয়ে রাখি, পুকুর আলারা এসে কিনে নিয়ে যায়।
কয়েকজন মুরগির দোকানি জানান, আমাদের দোকানের পিছে যে ডোবাটি মধ্যে ময়লা ফেলা হচ্ছে, সেগুলো গরু জবাইয়ের বর্জ্য কাঁচা বাজার ও মাছ বাজারের বর্জ্যসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সেই বর্জ্য পচে দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়াচ্ছে। সেই প্রকট দুর্গন্ধে থানার গেটের সামনে যাচ্ছে। বাজারে নির্দিষ্ট একটি স্থানে ময়লার ভাগাড় বানিয়ে দিলে এমন হতো না। তাই নির্দিষ্ট একটি স্থানে ময়লার ভাগাড় করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। গরুর কসাই,মাছ ও সবজি বিক্রেতারা জানান, বাজারে ময়লা ফেলার জায়গা না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে ওই স্থানে ময়লা ফেলা হচ্চে। বাজার কমিটি নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফালানোর জায়গা করে দিলে এমন হতো না।
সিরাজদীখান বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ‘সমবায় মার্কেটের সামনের অংশ ইজারা দেওয়া হয়েছে। আর পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব ইজারাদারের। যারা ইজারা নিয়েছে, তারা বাইরে দোকান বসায়। সেই দোকানিরা ওই স্থানে ময়লা ফেলেন। এতে ময়লার স্তূপ হয়েছে। এই বিষয়ে আমরা ইজারাদারদের বলে দেব, ওই স্থানে যাতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ না করে।’
এছাড়া মুরগি পট্টি পূর্ব পাশের একটি ডোবায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মাছ,গরু ও মুরগির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, এটা বন্ধ করার চেষ্টা করছি। রশুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবু সাইদ বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কয়েকবার বাজার কমিটির সঙ্গে আলাপ করেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বাজার কমিটি ও ইজারাদারদের নিয়ে আবারও আলাপ-আলোচনা করব। তাঁরা কোনো স্থায়ী সমাধান না দিতে পারলে ইউএনও স্যারের সঙ্গে আলোচনা করে স্থায়ী জায়গা করে সেখানে ময়লা ফেলানোর ব্যবস্থা করব।’
সিরাজদীখান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আজগর হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে থানার গেটের সামনের রাস্তার অপর সাইট মিষ্টির দোকানের পেছনে ময়লার ভাগাড় থেকে প্রকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। থানার সামনে এসে দাড়িয়ে থাকা যায় না। থানায় আসা সেবাগ্রহীতা এবং বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা খুবই দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। এ বিষয়ে বাজার কমিটিসহ উপজেলা প্রশাসন সরেজমিনে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাবিবা ফারজানা বলেন, এ বিষয়টি আগে কেউ আমাকে জানায়নি, আপনার মাধ্যমে জেনেছি, আমি সরেজমিনে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এইচআর