বরেন্দ্র অঞ্চলে পুরো দমে চলছে বোরো ধান কাটা-মাড়াই। তবে শ্রমিক সঙ্কটে ব্যাহত হচ্ছে কাটা মাড়াই। এ ক্ষেত্রে বেশি ধান দিয়েও কাটা ও মাড়াইয়ের শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানায় কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ বলছে, ৫০ ভাগেরও বেশি ধান কাটা মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এ বছর ৬৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলায় বোরো ধান আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে। ব্রি ধান ২৮, জিরাসাইল জাতের ধান বেশি চাষ হয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাাড়া ইউনিয়নের ধামিলা গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম ১০ বিঘা জমিতে ব্রি ধান ৯০ চাষ করে। প্রতি বিঘায় ৮ হাজার টাকা খরচ হলেও ২২ মণ ফলন হয়েছে। পোলার ধান হওয়ায় বাজারে দাম বেশি। প্রতিমণ ধান ২হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো ফলন ও দাম পেয়ে খুবই খুশি।
ফকিরা পাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ ৬বিঘা জমিতে জিরাশাইল জাতের ধান চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছে। প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয়েছে ২৪ মণ।
উপজেলার বাংলাকান্দর রাস্তার ধারে কাটা ধান একাই আঁটি বাধছিলেন হৃদয় আলী (৩০)। হৃদয় জানান, তিনি মূলত নলক‚পের মিস্ত্রি। এবার নিজের এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নলক‚পের কাজ বাদ দিয়ে এক চাচাতো ভাইকে নিয়ে নিজেরাই ধান কেটেছেন। ধান মাড়াইয়ের কাজটিও তাদের করতে হবে।
গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট বাজারে এসে থামল একটি ভটভটি টেম্পু। সেটি থেকে একে একে নামলেন ১০-১৫ জন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারী-পুরুষ শ্রমিক। তারা সবাই শহরে গিয়েছিলেন সিটি করপোরেশনের রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের কাজ করতে। কথা হলো ভটভটি টেম্পুর চালক কাঁকনহাট সেরাপাড়া এলাকার জুয়েল রানার সঙ্গে।
তিনি জানান, শ্রমিকদের নিয়ে তিনি শহরে যান। কাজ শেষে আবার নিয়ে আসেন। মাঝে তিনিও শহরে গিয়ে দিনমজুরের কাজে লাগেন। জুয়েল বলেন, শ্রমিকদের প্রায় সবার কিস্তি আছে। শহরে কাজে গেলে প্রতিদিন নগদ টাকা পাওয়া যায়। এতে কিস্তি দেওয়া সহজ হয়। তাই ধান না কেটে তারা শহরে যাচ্ছেন।
এমন শ্রমিক সঙ্কট নিয়ে জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, পুরো দমে ধান কাটা মাড়াই কাজ চলছে। এখনই শ্রমিক সংকট বলা যাবে না। তবে শ্রমিক আসতে শুরু করায় আগামী সপ্তাহের মধ্যে অধিকংশই জমির ধান কাটা মড়াই শেষ হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকতা মরিয়ম আহমেদ বলেন, এবার বোরো ফলন ভালো হচ্ছে। কিছু এলাকায় শিলা বৃষ্টির কারণে ফলন কম। কৃষকদের ধান কাটা মাড়াইয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণের বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠে থেকে সহযোগিতা করছে।
এআরএস