জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

বৃষ্টিপাত নেই, হালদায় বাড়ছে লবণাক্ততা

মো. সাহাবুদ্দীন সাইফ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রকাশিত: মে ৯, ২০২৩, ০৩:৪৯ পিএম
বৃষ্টিপাত নেই, হালদায় বাড়ছে লবণাক্ততা

বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী বাংলাদেশের মেজর কার্পজাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। হালদায় এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়েছে কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন মৌসুম।

পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় এপ্রিল মাসের দুটি জো এবং মে মাসের পূর্ণিমার জো অর্থাৎ তৃতীয় জো (২ থেকে ৭মে) অতিক্রম হলেও এখনো কিন্তু দেখা মিলছেনা স্থানীয়ভাবে শ্বেতস্বর্ণ হিসেবে পরিচিত কার্পজাতীয় মাছের কাঙ্ক্ষিত ডিম।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বেড়েছে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা এর ফলে  কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কর্ণফূলী নদীতে কমেছে পানি প্রবাহ। এর প্রভাবে জোয়ার সময় কর্ণফূলী নদীর লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে হালদায়।

এ লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে হালদার কার্পজাতীয় মাছের বিভিন্ন স্পনিং গ্রাউন্ডে। বর্তমানে হালদার বিভিন্ন স্পনিং গ্রাউন্ডের পানিতে স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক লবণাক্ততার উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে।

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, হালদার উজানে লবণাক্ততার উপস্থিতি ও মাত্রা পরীক্ষা করার জন্য গত ৪ই মে বৃহস্পতিবার পুর্ণাঙ্গ জোয়ারের সময় হালদা নদীর স্পনিং গ্রাউন্ডসহ উজানের আলম্মেরকূম থেকে মদূনাঘাট পর্যন্ত নয়টি পয়েন্টের (আলম্মেরকূম, সাত্তারঘাট, কান্দরআলীহাট, নোয়াহাট, মাছুয়াঘোনা, নাপিতেরঘাট, আমতুয়া, রামদাশমুন্সিরঘাট ও মদূনাঘাট বড়ূয়াপাড়া) পানির নমুনা সংগ্রহ করে সরাসরি হালদা নদীতে পরীক্ষা করে দেখা যায় হালদার পানিতে মা মাছের প্রজননের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্যারামিটার যেমন পানির তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, টিডিএস, এবং তড়িৎ পরিবাহিতার মান স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক। ঐদিন বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা ছিল (৩২ থেকে ৩৪.৫) ডিগ্রী সেলসিয়াস। উচ্চ তাপমাত্রার ফলে পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের (২২ থেকে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) তুলনায় বেড়ে (৩১ থেকে ৩২.২) ডিগ্রী সেলসিয়াসে উন্নীত হয়। টিডিএস এর মান ৩০৯ থেকে ২০০০ পিপিএম এবং তড়িৎ পরিবাহিতার মান ৬২০ থেকে ৪০০০ মাইক্রোসিমেন্স/সেমি. এবং লবণাক্ততার মান  ০.২ থেকে সর্বোচ্চ ২পিপিটি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

সর্বোচ্চ লবণাক্ততা রেকর্ড করা হয়েছে মুদুনাঘাট হ্যাচারির বড়ুয়াপাড়ায় এবং সর্বনিম্ন আলম্মের কুমে। রামদাস মুন্সির ঘাট থেকে আমতুয়া হয়ে নাপিতেরঘাট পর্যন্ত ১ পিপিটি এবং এরপর থেকে কান্দর আলীহাট পর্যন্ত ০.৫ পিপিটি লবণাক্ততা রেকর্ড করা হয়েছে। স্বাদুপানিতে লবণাক্ততার স্বাভাবিক মাত্রা ০.৫ পিপিটি বা তার কম। তবে হালদায় প্রাপ্ত লবণাক্ততা স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক।

কিন্তু বিদ্যমান এই সাময়িক লবণাক্ততা কার্পজাতীয় মাছের উপর খুব বেশি প্রভাব ফেলবেনা কারণ মেজর কার্পজাতীয় মাছ সহজেই ৫ পিপিটি এমনকি সর্বোচ্চ ১৪ পিপিটি পর্যন্ত লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। কিন্তু লবণাক্ততার মাত্রা সহনশীলতা সীমার বাইরে গেলে তা কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন আচরণে পরিবর্তন আনবে, যার ফলে স্পনিং কার্যকলাপ হ্রাস, বিলম্বিত স্পনিং বা স্পনিং সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি হতে পারে। এই পরিবর্তনগুলির ফলে হালদা নদীর মেজরকার্প জাতীয় মাছের সামগ্রিক জনসংখ্যা হ্রাস পেতে পারে।

তবে আশারবাণী হচ্ছে বৃষ্টি হলে লবণাক্ততাসহ অন্যান্য প্যারামিটার সমুহের মান আদর্শ মানের মধ্যে চলে আসবে। অনুকূল পরিবেশ না পেলে অর্থাৎ বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি না হলে পাহাড়ি ঢল নেমে না আসলে চলতি পূর্ণিমার জো‍‍`তে মা মাছের ডিম ছাড়েনি।

সেক্ষেত্রে পরবর্তী চতুর্থ জো অর্থাৎ অমাবস্যার জো (১৬-২১) মে, তা নাহলে পরবর্তী জুন মাসের পূর্ণিমার জো (১-৬) জুন অথবা সর্বশেষ (১৫-২০) জুন অমাবস্যার জো‍‍`তে কার্পজাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়বে বলেও জানান তিনি।

এআরএস