আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো যখন মাঠ গোছাতে ব্যস্ত। তখনও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ অভিভাবকহীন।
দেড় বছর থেকে কমিটি নেই উপজেলা ছাত্রলীগের। অপরদিকে দেড় যুগ আগে গঠন করা আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে বাঁচামরা অবস্থায় চলছে উপজেলা যুবলীগ। এমন করুন চিত্র পৌর ছাত্রলীগ-যুবলীগেও!
মেয়াদ শেষ হওয়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। এর ১৫ মাস অতিবাহিত হলেও, নতুন কোন কমিটি দিতে পারেনি সংগঠনটি। এরআগে গত ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর ১৭ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা কমিটির অনুমোদন দিয়েছিলো জেলা ছাত্রলীগ। এক বছর মেয়াদী এই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে দু`বছরের মাথায়।
এই উপজেলার অর্ন্তগত ছাত্রলীগের পৌর শাখা কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং দলীয় কার্যক্রম না থাকায় গত ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর দলীয় প্যাডে সেই কমিটি বিলুপ্ত করে উপজেলা ছাত্রলীগ। এরপর বিতর্ক শুরু হয় ছাত্র সংগঠনটিন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পৌর শাখা জেলা নাকি উপজেলার অধিনে! তবে শেষ পর্যন্ত ওই বিলুপ্ত অবস্থাতেই আছে পৌর ছাত্রলীগ।
এরচেয়েও করুন চিত্র উপজেলা যুবলীগের। গত ২০১৭ সালে আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা যুবলীগ। মাঝে ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানম হত্যা চেষ্টার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয় ওই কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম এবং সদস্য আসাদুল ইসলাম।
এ ঘটনার পর তাদের দুজনকে দল থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। সেই সময় বহিষ্কারের কথা নিশ্চিত করেছিল কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
সব মিলিয়ে ১৭ সালের পর থেকে টানাহেঁচড়ার মধ্যে দিয়েই চলছে উপজেলা যুবলীগ। মাঝে অতিবাহিত হয়েছে ৫ বছরের অধিক সময়।
একই চিত্র পৌর যুবলীগেও। কয়েক বছর আগে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করে উপজেলা যুবলীগ। তবে সেই কমিটি কোন সম্মেলনে আয়োজন করতে পারেনি। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির পদ নিয়েই রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে নেতাকর্মীরা।
উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হবার পর অনেক নেতাকর্মী নতুন কমিটির পদ পেতে দৌঁড়ঝাপ ও তদবির শুরু করে। পদ প্রত্যাশীরা দৌঁড়ঝাপ করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তবুও নতুন কমিটি গঠনে কোন পদক্ষেপ নেয়নি ছাত্রসংগঠনটি।
অপরদিকে দীর্ঘসময় ধরে আহ্বায়ক কমিটি মাধ্যমে চলে আসা উপজেলা ও পৌর যুবলীগের কমিটি দ্রুত বিলুপ্ত হবে, এমন স্বপ্নে সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা সহ যুবলীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা দৌঁড়ঝাপ করেছেন উপর মহলের দাঁড়ে দাঁড়ে। তবে এই উপজেলায় সংগঠনটির কার্যক্রম গতিশীল করতে কোন পদক্ষেপ নেয়নি জেলা যুবলীগ।
যুবলীগের পদপ্রত্যাশী সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগের আমরা যারা সাবেক নেতা আছি, তারা আসন্ন যুবলীগের কাউন্সিলে যোগ্যতা অনুসারে পদ পাব বলে আশা করছি। সে অনুযায়ী দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলছি। কয়েক বছর যাবত যুবলীগের তেমন কোন কার্যক্রম নেই। আমরা যুবলীগের হাল ধরতে চাই।’
ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী মেহেদী হাসান সিজু বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হবার পর থেকে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য ৬ থেকে ৭ জন নেতা পদ পেতে তদবির করে যাচ্ছি। দলের নেতাদের সাথে আমরা কথা বলছি। আমাদের জীবন বৃন্তান্ত আমরা জমা দিয়েছি। আশা করি আমরা যারা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়, তাদেরকে যথাযথ মূলায়ন করা হবে।’
দিনাজপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতা বলেন, ‘শুধু ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নয়! আমাদের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম যেসব সংগঠন গুলোর জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের কমিটি নেই বা মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেসব কমিটি গঠনে দলগুলোর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আমরা তাগাদা দিচ্ছি। আশা করছি আগামী দু’এক মাসের মধ্যে একটি ফলাফল আমরা পাব।’
এদিকে দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলেন, ‘শুধু ঘোড়াঘাট নয়! আমার আসনের চার উপজেলায় যুবলীগের বিষয়ে আমি রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সাথে কথা বলেছি। সে অনুযায়ী ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকা করে তা জমা দেওয়ার জন্য আমি নির্দেশনা দিয়েছি। নতুন কমিটি গঠনে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ছাত্রসংগঠনটির বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতার সাথে কথা হয়েছে। তারা আমাকে আশ্বস্থ করেছেন। অতিদ্রুত সময়ে আমাদের ছাত্রগঠনটিরও নতুন কমিটি হবে। সর্বপোরী ত্যাগী এবং আওয়ামী পরিবারের সন্তানদেরকে এই দুটি সংগঠনের কমিটিতে মূল্যায়ন করা হবে।’
এইচআর