গাজীপুরের কাশিমপুরে দিনে দুপুরেই চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। ছোট-বড় সকল শ্রেণি পেশার মানুষ মাদকের সঙ্গে মধুর সখ্যতা গড়ে তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে সুকৌশলে বহিরাগত মাদকসেবী গার্মেন্টস কর্মীদেরকে দিয়ে মাদক পাচার ও বিক্রি করছে। আর এই মাদক প্রচারকারীরা মাঝেমধ্যে পুলিশের হাতে ধরা খেলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় মাদকের মূল ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় এলাকাবাসী মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। মাঝে মাঝে অতিরিক্ত মাদকসেবনে করে এলাকায় দোকানপাট ও বাসা বাড়িতে চালায় অতর্কিত হামলা। এদের ভয়ে বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত গার্মেন্টস কর্মীরা রাতে কারখানা ছুটি হলে বাসায় ফিরতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ার সুবাদে এখানে বহু মানুষের বসবাস। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জীবিকার তাগিদে মহানগরীর পাড়া-মহল্লায় বহিরাগত মানুষেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত লোকজনদের নিয়ে বেড়েছে মাদকাসক্তের সংখ্যা।ছোট থেকে বড় প্রায় সব বয়সের মানুষের কাছেই দেশীয় মদ, ইয়াবা, গাঁজাসহ প্রায় সব ধরনের মাদকসেবনে যেন ঝুঁকে পড়ছে।
দিবা-রাত্রি মাদকসেবীরা অলিতে-গলিতে জনসম্মুখেই সেবন করছে মাদক। তবে মাদকসেবী ও সাপ্লাইকারীরা অন্যান্য জেলা থেকে আগত অস্থায়ী চাকরিজীবী। মাদকসেবীদের মধ্যে থেকে অনেকেরে ভয়-ভীতি ও বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মাদক সাপ্লাইয়ের কাজটি করিয়ে থাকে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রায়ই গ্রেপ্তার করছে মাদকের সঙ্গে জড়িত মধ্যস্বত্বভোগীদের।
অথচ ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূল-হোতারা। মাদকের এই সহজলভ্যতার কারণে কাশিমপুরের লতিফপুর, লৌহাকৈর, লস্করচালা, সুরাবাড়ি, সারদাগঞ্জ, বাগবাড়ী এলাকায় বেড়েই চলেছে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীর সংখ্যা। মাদকসেবীরা মাঝে মধ্যে মাদকসেবনের টাকা জোগাড় করতে না পারায় জড়িয়ে পড়ছে চুরি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।
এলাকাগুলোতে নতুন করে আসা শ্রমিকদেরকে নিয়ে মাদকসেবনে উৎসাহিত করছে। মাদকসেবনে বাধা দিতে গেলে ঘটে বিপত্তি। মাদকসেবী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ এখানকার লোকজন। এভাবেই ওই এলাকার মাদকাসক্তদের দ্বারা বিভিন্ন ধরনের হয়রানির স্বীকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। মুখ খুলতে চাইলেও প্রাণের ভয়ে অনেকেই নীরবে নিবৃতে সহ্য করে যাচ্ছে।
লতিফপুর এলাকায় বসবাসকারী নাজিম হোসেন বলেন, আমরা এখানে ভাড়া বাসায় বসবাস করি। আমাদের স্থানীয় কোন লোকজন না থাকায় আমরা তেমন কোনো প্রতিবাদ করতে পারি না। বিদ্যুৎ চলে গেলে মাঝে মধ্যে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ঘরের দরজা জানলা খুলে দিলে বাহির থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদকের ধোঁয়া এসে ঘর ভরে যায়। কিছু বলতে গেলেই মাদকসেবীরা রাতে মাতাল অবস্থায় দোকান পাটসহ বাসা বাড়িতে হামলা চালায়। নারী শ্রমিকরা কর্ম শেষে বাড়ি ফেরার পথে মাঝেমধ্যেই মাদকাসক্তদের সম্মুখে পড়তে হয়। তখন তাদেরকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করে। প্রতি মাসের বেতন হলে তাদের কাছ থাকা নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়।
রওশন মার্কেট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, এখানে মাদক নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি সামগ্রি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত্রতত্র যেখানে-সেখানে পাওয়া যাচ্ছে মাদক। দিনের বেলাতেই বিক্রি হচ্ছে এই মাদক। এলাকাবাসী প্রতিবাদ তো দূরের কথা কিছু বলতে গেলেই আমাদের ওপর বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি আসে। স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি দেখার দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার অপরাধ (উত্তর) রেজওয়ান আহম্মেদ জানিয়েছেন, মাদকের সমস্যাটা শুধু কাশিমপুরে না সারা বাংলাদেশের বড় সমস্যা। আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান একদম জিরো। আমরা মাদক ধরা ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি এখনো অব্যাহতি আছে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি আর মাঝে-মধ্যেই বড় বড় চালান উদ্ধার হচ্ছে। আমরা নিয়মিত মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছি। এই অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবী, এভাবে যদি মাদকের ছড়াছড়ির দিন দিন বাড়তে থাকে তাহলে সমাজের উঠতি বয়সের তরুণ সমাজ মরণ নেশায় মাদকে একসময় ধ্বংস হয়ে যাবে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা না থাকলে মাদকের এই ভয়াবহতা আরো ছড়িয়ে পড়বে। মাদক ব্যবসায়ীরা সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে বিভিন্নভাবে মাদক পাচার করেছে নিয়মিত। তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় না আনতে পারলে মাদকের অবাধ বিক্রি বন্ধ হবে না। নিরসন হবে না কখনোই এই মাদকের আখড়া।
মোত্তাসিম/এআরএস