ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’: বাঁশখালীতে অরক্ষিত বেড়িবাঁধে আতঙ্ক

বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৩, ০৭:৪৯ পিএম
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’: বাঁশখালীতে অরক্ষিত বেড়িবাঁধে আতঙ্ক

চট্টগ্রাম বাঁশখালীতে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আতঙ্ক  বাড়ছে। গতকাল থেকে প্রতিটি ইউনিয়নে মাইকিং করে জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকরা ঘূর্ণিঝড়ের আগাম মাইকিংসহ প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। জনসচেতনতায় এখনো পর্যন্ত মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। তবে দক্ষিণ বাঁশখালী‍‍`র মানুষ এখনো তোয়াক্কা না করেই লাবণ চাষে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়।

বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, সকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। বাতাস ও বৃষ্টি নেই। তবে বিকেলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি দেখা গেছে। উপকূলের জনসাধারণের মধ্যে কিছু অংশ বাঁশখালীর পাহাড়ি এলাকায় আশ্রয় নেওয়ার জন্য চলে গেছেন। আবার অনেকে বাড়ির পাশের আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন।

এদিকে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয়রা বলছেন, বেড়িবাঁধ মেরামত না করে মাইকিং করা খুবই লজ্জাজনক।

ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূলীয় এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। আজ দুপুরে মোখার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকা পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, জেলা পুলিশ সুপার এস. এম শফিউল্লাহ, এ সময় বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈদুজ্জামান চৌধুরী, বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন, খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

বাঁশখালী উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি অফিসের রেডিও অপারেটর মিঠু কুমার দাশ জানান, ‘উপজেলার পুকুরিয়া, খানখানাবাদ, বাহারছড়া, কাথারিয়া, সরল, শীলকূপ, গণ্ডামারা, শেখেরখীল, পুঁইছড়ি, ছনুয়া ইউনিয়নকে উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই ১০ ইউনিয়নে ৭১ ইউনিটে ১ হাজার ৪২০ স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।

চট্টগ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, বাঁশখালীতে ৩৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ১.২ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ২০০ মিটার খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল এলাকায়। বাকি অংশ ছনুয়া ইউনিয়নের শেলবন পয়েন্ট ও ছনুয়ার টেক এলাকায়।

স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময়ও ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছিল ওই এলাকা। লবণের মাঠ, মাছের ঘের, ফসলসহ নোনাজলে ভেসে যায় শতকোটি টাকার সম্পত্তি। সেই সময় কাটিয়ে ওঠার আগেই কড়া নাড়ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা।

ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এবার খানখানাবাদ ও ছনুয়া ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের অতি ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলো সংস্কারে নেমেছেন স্থানীয়রা। শনিবার সকাল থেকে বালি ও বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারের চেষ্টা করছেন তারা।

খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ‘আমাদের এলাকার বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বেড়িবাঁধ সংস্কার না করে নির্লজ্জের মতো মাইকিং করে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা।’

ঘূর্ণিঝড়ের আগাম প্রস্তুতি হিসাবে বাঁশখালীতে ১১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৮৫ হাজার মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়।

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, উপকূলের বাসিন্দারা অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ঘর-বাড়ি অরক্ষিত তাই পুলিশ প্রশাসন আইন শৃংখলা রক্ষার্থে সর্বত্র মাঠে রয়েছে এবং সর্তক করে তুলছে গ্রামবাসীকে।

উপকূলীয় এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে, গন্ডামারা বেড়িবাঁধের ওপর থাকা বসতবাড়ি গৃহবধূ ফাতেমা বেগম বলেন, মোখা কেমন আঘাত করবে জানি না। তাই আমরা ঘরে রয়ে গেছি। তাছাড়া আমাদের কষ্টে উর্পাজিত সম্পদ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। গরু ছাগল ও হাঁস মুরগী গুলো স্বাভাবিক রয়েছে। একই বক্তব্য দিয়েছেন অন্ততঃ ১০/১২ জন গৃহবধূ। ওখানকার লবণ চাষী আব্দুর ছালাম বলেন, আমরা আগে থেকে ঘূর্ণিঝড়ের কোন সর্তকবার্তা পায়নি। একারণে লবণ মাঠে ৩০ শতাংশ লবণ রয়ে গেছে। ব্যাপক প্রচারণা দরকার ছিল। সরলের গৃহবধূ নার্গিস বেগম বলেন, মাঠে প্রচুর লবণ রয়ে গেছে, স্বামী মাঠে লবণ উঠাতে গেছে। সব কিছু শেষ করে রবিবার আশ্রয় কেন্দ্রে উঠবেন।

এআরএস