ঠাকুরগাঁও জেলার বাজার গুলোতে লাগামহীন হয়ে পড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। বর্তমানে দেশের অন্যতম আলোচ্য বিষয় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি। কালোবাজারী, মুনাফাখোর, মজুতদার প্রভৃতির কারণে খাদ্যদ্রব্য, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মরিচ, চিনি, দুধ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য দ্রব্যগুলোর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন এবং ক্রমে এসব পণ্য সংগ্রহ কঠিনতর হচ্ছে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর জন্য। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সীমাকে অতিক্রম করে অর্শ্বের ন্যায় দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে প্রতিটি পণ্যের মূল্য।
প্রতিটি পন্যের দাম এখন ঊর্ধ্বমুখি। কোনভাবেই কমছে না এসব দ্রব্যের মূল্যে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে প্রতিটি পণ্যের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিসহ সবজির বাজারেও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে দ্রুত বেড়ে যায় সবজির দাম। এছাড়াও সংকটের কারণেও জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেশি। এদিকে বাজার ঊর্ধ্বগতির জন্য সবজি বিক্রেতারা বৃষ্টিকে দুষলেও ক্রেতারা দুষছেন বিক্রেতাদেরকে। তাদের দাবী বৃষ্টি এখন আর নেই। তার পরেও বাজারের কৃত্রিমভাবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে ব্যবসায়ীরা।
২০ মে (শনিবার) জেলার বিভিন্ন বাজারসহ রাণীশংকৈল উপজেলার অন্যতম বৃহৎ বাজার (সাপ্তাহিক) শনিবার হাট নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। কোনভাবেই কমছে না প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। এতে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। বাজার করতে গিয়ে চরম বেকায়দায় পড়ছেন দিনে আনে দিন খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে,প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১০০ টাকা ,পিঁয়াজ বর্তমানে ৬৫ টাকা, রসুন ১২০ টাকা , আদা ২৪০ টাকা,শুকনো মরিচ ৪৪০ টাকা,পটল ৫০ টাকা , বেগুন ৪০ টাকা , করলা ৪০ টাকা , শসা ২৫ টাকা , বরবটি ৪০ টাকা , গাজর ৫০ টাকা , টমেটো ৩০ টাকা ,কচুর লতি ৫০ টাকা , আলু ৪০ টাকা , ঝিংগা ৪০ টাকা ,ঢেরস ৪০ টাকা , লেবুর হালি ৪০টাকা এছাড়াও ফল এবং সবজিও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। গরিবের আমিষের চাহিদা পূরণ করতে যে পাঙ্গাস মাছের ভুমিকা অপরিসীম, তার দামও এখন নাগালের বাইরে।গত কয়েক মাস আগে ১২০-১৩০ টাকা কেজিতে পাঙ্গাস মাছ গেলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দামও ক্রয় ক্ষমতার উর্ধ্বে। কেজি প্রতি পোল্ট্রি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়।
এদিকে চাল, ডাল, তেল ও চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ক্রয় ক্ষমতার উর্ধ্বে। সব মিলিয়ে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নেই বাজার ব্যবস্থা।
বাজার করতে আসা পার্শ্ববর্তী পীরগঞ্জ উপজেলার হাফিজুল ইসলাম জানান, কাঁচাবাজার সহ সব জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে এতে করে আমাদের মতো অল্প আয়ের লোকদের খুবই সমস্যা হচ্ছে।
উপজেলার বাচোর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে সাধারণ মানুষ বাজার করতে গিয়ে অল্প কিছু কিনেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। এতে করে সংসার চালাতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ অতিমাত্রায় ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়বে।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, উচ্চমূল্যে তারা কিনছেন তাই তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তীব্র দাবদাহ আর বৃষ্টিতে সবজির গাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই পাইকারী বাজারে দাম বৃদ্ধি হওয়ায় খুচরা বাজারেও বেশী দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে তারা মনে করেন।
এবিষয়ে কথা হয় কাতিহার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ূন আহমেদ (বাবুল) এর সাথে। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে জীবনযাত্রার সম্পর্ক ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। একটি পরিবার কীভাবে তাদের দৈনন্দিন জীবনকে নির্বাহ করবে তা নির্ভর করে তাদের আয়, চাহিদা এবং দ্রব্যমূল্যের ওপর। প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের মূল্য যখন সহণীয় পর্যায়ে এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে তখন তাদের জীবন কাটে স্বস্তিতে।
অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন সাধারণ মানুষের আর্থিক সংগতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যায় তখন দরিদ্র এবং অতিদরিদ্র পরিবারে চলে অর্ধাহার, অনাহার এবং পারিবারিক অশান্তি। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে একদিকে জনজীবনে নেমে আসে কষ্টের কালো ছায়া। অন্যদিকে মুনাফাখোরী, কালোবাজারীদের কারণে দেশে বিরাজ করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বর্তমান এ যুগে ন্যায়সঙ্গত মূল্যে কোনো পণ্যই আর পাওয়া যায় না। প্রতিটি পণ্যেই যেন অধিক মূল্যের আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে। অথচ এক বা দুই দশক আগেও এই অবস্থা ছিলো না। বর্তমান সরকার জনবান্ধব সরকার। আশা করছি সরকার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবে।
আরএস