সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় জেলেখা বেগম নামে এক জীবিত বয়স্ক নারীকে মৃত দেখিয়ে বয়স্কভাতার কার্ড বন্ধের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ৮নং নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে ।
জানা যায়, নন্দুয়ার ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সন্ধ্যারই সাতঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব. রহিমের স্ত্রী জেলেখা। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছিলেন।
হঠাৎ করেই ভাতার টাকা আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে জেলেখাকে জানানো হয় যে, তিনি ৭ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। যা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের দেয়া প্রত্যায়ন পত্রে নিশ্চিত করেছেন।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
জেলেখা বেগম বলেন, বাদশা মেম্বার আমার মৃত্যুর কথা কহেনে, আমার বয়স্ক ভাতা কাটে দিল আমি নাকি মারা গেছি। তিনি আরো বলেন, সমাজসেবা অফিসে গিয়ে শুনতে পাড়ি আমাকে মৃত দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বাদশা একটি মৃত্যু সনদ দিয়েছেন এবং আমার বদলে অন্য একজনকে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করেন।
অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে ইউপি সদস্য বাদশা জানান, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
রাণীশংকৈল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত, একটি প্রত্যয়ন পত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি,জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। তবে মৃত্যু সনদ ছাড়া ভাতা পরিবর্তনের সুপারিশ দ্বারা কিভাবে এটি হয়,যেখানে বিধি মালায় উল্লেখ রয়েছে। (ভেরিফাই ডট ডি বি আর আই এস ডট গভ ডিবি) ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত্যু দেখাতে পারবেনা। সাংবাদিকের এ প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়ন পত্র দেয় উনারা এটি প্রতিস্থাপন করে থাকি।
এ ছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোন তথ্য রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভূক্তি পাওয়া যায়নি ইউনিয়ন পরিষদে।
এ ব্যাপারে নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী মুঠোফোনে বলেন, এ বিষয়টিতে ব্যক্তিগত ভাবে আমার খুব খারাপ লেগেছে, ঐ বৃদ্ধা অত্যন্ত গরিব, তার ছেলে নেই। আমি নিজেই তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা করি। ঐ মেম্বার মূর্খ ছেলে, নিজের নামও লেখতে জানেনা,কিভাবে এটি করলো আমি জানি না। কারণ মেম্বার উপর আামার প্রত্যয়ন থাকবেই। মেম্বারের সীল সই যদি থাকে,তাহলে আমি সীল সই দেই, আমিতো আর সব মহিলাদের নাম জানি না। তিনি আরো বলেন মেম্বারের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সইদুল হক বলেন,আমি বিষয়টি শুনেছি, নিঃসন্দেহে এটি একটি অন্যায় বা অপরাধ। একজন জীবিত মহিলা,তিনি বয়স্ক ভাতা পেতেন। তার মৃত্যু হয়েছে এ মর্মে সার্টিফিকেট দিয়ে তাকে মৃত্যু দেখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বয়স্ক ভাতা সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ, এটি নিয়ে যারা দূর্নীতি করেছে তাদের বিচার হওয়া উচিত। আমি মনে করি প্রশাসন এই বিষয়ে খতিয়ে দেখবেন এবং মহিলাটিকে পুনরায় তার ভাতা ফিরে দেয়া হোক আমি অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান, তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুত্বর অভিযোগ,আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।
এইচআর