ফেনীতে ভুল অপারেশনে শিশুর মৃত্যু, ঘুম ভাঙলো স্বাস্থ্য বিভাগের

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৩, ০১:০৬ পিএম
ফেনীতে ভুল অপারেশনে শিশুর মৃত্যু, ঘুম ভাঙলো স্বাস্থ্য বিভাগের

ফেনী শহরের আল মদিনা হাসপাতালে ভুল অপারেশনের কারণে ওসমান গণি (৫) নামে এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রোববার (১১ জুন) লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন না থাকায় হাসপাতালটিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

নিহত ওসমান গণি ফেনী সদর উপজেলার মধ্যম ফরহাদ নগর খাইরা আলাউদ্দিন হুজুর বাড়ির সাইফুল ইসলামের ছেলে।

এর আগে শনিবার (১০ জুন) বিকেলে ভুল অপারেশনের কথা জানাজানি হওয়ার পর রোগীর স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে চিকিৎসককে ভেতরে রেখে অপারেশন থিয়েটারে তালা লাগিয়ে দেয় স্বজনরা। খবর পেয়ে ফেনী মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

নিহতের স্বজনরা জানান, শনিবার ওসমান গণির হার্ণিয়া অপারেশনের জন্য ফেনী শহরের দাউদপুল ব্রিজ সংলগ্ন আরামবাগ এলাকার আল মদিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসক যাবতীয় রিপোর্ট দেখে মোট ৩টি অপারেশন করতে হবে বলে জানায়। এতে অভিভাবকরা সম্মত হলে বিকাল ৩টার দিকে ওসমানকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়।

দীর্ঘ প্রায় ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত থিয়েটার থেকে কোনো চিকিৎসক বাইরে না আসায় ও রোগীর বিষয়ে কিছু না জানানোয় স্বজনদের মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।

এক পর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওসমানের জ্ঞান ফিরছে না বলে জানিয়ে তাকে দ্রুত অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে।

বিষয়টি জানতে পেরে স্বজনরা অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করতে চাইলে তাদেরকে হাসপতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকরা বাধা দেয়।

পরবর্তীতে স্বজনরা ওসমান মারা গেছে জানতে পারার পর অপারেশন থিয়েটারে থাকা কর্তব্যরতদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।

এসময় ওসমানের মরদেহ ও চিকিৎসকদের অপারেশন থিয়েটারে রেখেই স্বজনরা তালা লাগিয়ে দেয়।

অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতালের লোকজন পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে আলোচনার পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসকদের মুক্ত করেন।

ওসমানের পিতা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলেকে কম টাকায় হার্নিয়া অপারেশনের জন্য এ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। তবে ভুল অপারেশনে তার মৃত্যুর বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমরা এর বিচার চাই। দোষীদের শাস্তি চাই। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।      

হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. আশরাফুল ইসলাম বলেন, মারা যাওয়া রোগী আমাদের আত্মীয় হয়। অপারেশন শেষ হওয়ার পর তার জ্ঞান ফিরেনি। অপারেশন থিয়েটারে তার সার্জারিতে কোনো ভুল হয়েছে কিনা সেটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

থিয়েটারে এ্যানেস্থেসিয়ার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম বলেন, এ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার পর রোগীর অপারেশন সম্পন্ন করা হয়। পরে তার জ্ঞান ফিরে না আসায় আমরা চিন্তায় পড়ে যাই। এক পর্যায়ে দেখি সে বেঁচে নেই। সম্ভবত সে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে।

থিয়েটারে সার্জারি চিকিৎসকের দায়িত্বে থাকা আদনান আহমেদ বলেন, নিয়ম মোতাবেক এ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার পর আমি তার অপারেশন শেষ করি। রোগীর জ্ঞান ফিরে আসা না আসাটা মূলত এ্যানেস্থেসিয়ার ওপর নির্ভর করে। বিষয়টি নিয়ে সঠিকভাবে তদন্ত হলে মূল সমস্যা বের হয়ে আসবে।

ফেনী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মাহফুজুর রহমান বলেন, হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনদের সঙ্গে সমস্যার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক হাসপাতালটি পরিদর্শন করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা মামলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. মো.শিহাব উদ্দিন জানান,ভুল অপারেশানে শিশু মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালটি পরিদর্শন করে লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন না থাকায় এবং আইন লঙ্ঘন করে পরিচালনা করায় মেডিকেল প্র্যাকটিস ও প্রাইভেট ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরিজ ( রেগুলেশন) অর্ডিনেন্স ১৯৮২” মোতাবেক পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

এআরএস