নরসিংদীর পলাশে শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে মরে যাচ্ছে এক সময়ের খরস্রোতা শীতলক্ষ্যা নদী। দখল আর দূষণের শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে এই নদীর জীববৈচিত্র্য। মরে ভেসে উঠছে শীতলক্ষ্যা নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির শত শত মাছ। সেই মাছ সংগ্রহ করতে নদী পারে ভিড় জমাচ্ছে শত শত মানুষ। বিভিন্ন শিল্পকারখানার বিশাক্ত বর্জ্যে বিষক্রিয়ায় ৫ কেজি থেকে শুরু করে ১৫ কেজি ওজনের ডিমওয়ালা মা মাছও মারা যাচ্ছে। ফলে দুচিন্তায় পড়েছে স্থানীয় জেলেরা। নদীতে মাছ না পেয়ে পেশা ছাড়ছেন অনেক জেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ফেরিঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে ৩১ মে থেকে ১২ জুন পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ মাছ মরে ভেসে উঠেছে। রুই, কাতলা, বোয়াল, আইড়, পাঙ্গাশসহ শতাধিক প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠছে। এছাড়া বড় বড় ‘মা’ মাছগুলো মরে যাওয়ার কারণে মাছের সংকট দেখা দিতে পারে নদীতে। শীতলক্ষ্যায় মরে ভেসে ওঠা মাছ সংগ্রহ করতে নদীতে ঝাপিয়ে পড়ছে নদী তীরবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষ। মশারি, খেয়াজাল, মইজাল, টানাজাল, ঠেলাজাল ও পলো নিয়ে এসব বিষাক্ত মাছ সংগ্রহ করতে শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধসহ নারীরাও নেমেছেন নদীতে। শুধু তাই নয়, মাছ ব্যবসায়ী ও জেলে সম্প্রদায় এসব মাছ বিক্রি করতে হাটবাজারে নিয়ে যাচ্ছে। তবে শীতলক্ষ্যার এসব মরা মাছে স্বাদ নেই বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা যায়,দীর্ঘদিন ধরে নদীর দু’পাড় নরসিংদীর পলাশ ও গাজীপুর উপজেলায় অবস্থিত বিভিন্ন শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদীতে। লাল রঙের বিষাক্ত পানি সরাসরি নদীতে ফেলার কারণে নদীর পানি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে মরে যাচ্ছে নদীর মাছ। এছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগেরই ইটিপি প্লান্ট না থাকায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এ নদীতে। কিছু প্রতিষ্ঠানের ইটিপি প্লান্ট থাকলেও রাতের আঁধারে বর্জ্যগুলো সরাসরি ফেলছে নদীতে। এসব বর্জ্যরে প্রভাবে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি কোথাও লাল, কোথাও আবার ধারণ করেছে কালচে বর্ণ। এতে বিপন্ন হয়ে পড়েছে নদীতে জীব বৈচিত্রেল অস্তিত্ব। এতে নদীর পানি দূষিত হয়ে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। নদীতে এখন কেউ গোসল করতে নামতে পারছে না। শিল্পকারখানার দূষণে বর্তমানে শীতলক্ষ্যা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। স্থানীয় বিভিন্ন শিল্পবর্জ্য এর জন্য দায়ী। এভাবে চলতে থাকলে শীতলক্ষ্যার সব মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, নদী কথা বলতে পারে না। নদী পক্ষে আমাদেরই কথা বলতে হবে। আমাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই নদী ও নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে। এজন্য দ্রæত শিল্প কারখানার দূষণ বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নদীসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। এই মুহূর্তে শীতলক্ষ্যায় যে ক্রাইসিস সৃষ্টি হয়েছে, সেটা যদি মনুষ্য সৃষ্টি হয়, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আর যদি প্রাকৃতিক সৃষ্টি হয় তাহলে পরিবেশ ও নদী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মোকাবিলা করব।
আরএস