যশোরের অভয়নগরে সাদা মাছের সাথে মিশ্র পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন মৎস্য চাষী মফিজুর রহমান দপ্তরী। সাদা মাছ ও গলদা চিংড়ি একই সাথে চাষ করে লাভবান হওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই মিশ্রপদ্ধতির মৎস্য চাষ।
সাদা মাছ যেমন, রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ করলে ঝুঁকি কম থাকে। যে কারণে লোকসানের আশংকা কম থাকে ও অধিক লাভবান হওয়া যায়।
মৎস্য চাষী মফিজুর রহমান জানান, মে-জুন মাসে সাগরে প্রচুর পরিমাণে গলদা চিংড়ি পোনা জন্মায়। রেনু-পোনা প্রতি পিচের দাম নেয় ২-৩ টাকা আর একটু বড় সাইজ হলে তার ক্রয় মূল্য ৫-৭ টাকা হয়। প্রায় ৩ থেকে ৫ ফুট পানিতে রেনু পোনা ছাড়তে হয়।
এসময় খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডিমের কুসুম, গম বা ভুট্টার গুড়া কিংবা ডিমের কুসুমের সাথে মিশিয়ে ছোট ছোট কনা তৈরি করে সেগুলি দিয়ে নার্সিং করা হয়। ২-৪ সপ্তাহ পর ওই রেনুপোনা যখন একটু বড় হয় তখন পকেট খুলে সমস্ত ঘেরে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এসময় খাবার হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানির জিরো ফিড ব্যবহার করা হয়। এর ১-২ সপ্তাহ পর পোনার মধ্যে একটু বড় সাইজের বিভিন্ন প্রজাতীর সাদা মাছ আনুপাতিক হারে দেয়া হয়।
পাশাপাশি সময়ে সাথে সাথে চিংড়ির রেনু-পোনার খাবারের তালিকায় পরিমাণ ও সাইজ বাড়তে থাকে। এভাবে প্রায় ৮ থেকে ১০ মাস পর্যন্ত খাবার খাইয়ে নার্সিং করতে হয় এবং প্রয়োজনমত ওষুধ, সার, খৈলসহ নানা জাতীয় প্রোটিন খাবার ব্যবহার করতে হয়। তাছাড়া ঝুঁকির ব্যাপারে তিনি জানান, যেহেতু চিংড়ি মাছের রোগবালাই বেশি হওয়ায় লোকসানের আশংকায় এচাষ থেকে দূরে থাকে মৎস্য চাষী। তবে এই পদ্ধতিতে চাষ করা হলে লোকসানের আশংকা থেকে অনেকটাই দূরে থাকা যায়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে মৎস্য চাষীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম থাকে। কারণ একটি প্রজাতীর মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্য প্রজাতীর মাছ দিয়ে সেই ক্ষতি পুশিয়ে নেয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে বেশি বড় জায়গা ব্যবহার না করে ছোট ছোট জায়গা ব্যবহার করা অধিক উত্তম।
কারণ একটি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্য পুকুরগুলি নিরাপদ থাকে। তাই মৎস্য চাষির পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। তবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এপদ্ধতিতে চাষ করলে অবশ্যই মৎস্য ব্যবসায়ী লাভবান হবে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন জানান, দেশের একটি মোটা অংকের রেমিটেন্স আসে চিংড়ি তথা সাদা সোনা খ্যাত এই মাছ রপ্তানি থেকে। সঠিকভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যদি এই মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হয় তাহলে দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
এছাড়া অভয়নগর উপজেলায় অনেক মৎস্য ঘের রয়েছে, যা থেকে অনেক মাছ উৎপাদন করা হয় এবং অনেক উদ্যোক্তা তৈরী হয়ে মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে।
এইচআর